বরিশাল বাস মালিক সমিতি এবং ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির মধ্যে চলমান বিরোধ এবার চূড়ান্ত রুপ ধারণ করেছে। প্রশাসনের সকল বিভাগের সমঝোতার চেষ্টাকে নাকচ করে দিয়ে আজ (১৯ ডিসেম্বর) নিজেদের রুট থেকেই পটুয়াখালী-কুয়াকাটা এবং ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, বাগেরহাট ও খুলনা রুটে বাস সার্ভিস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে ঝালকাটি বাস মারিক সমিতির নেতারা।
এদিকে ঝালকাঠির এমন দাবি অযোক্তিক ও ‘গায়ের জোরে’ দখলদারিত্ব বলে জানিয়েছে বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতারা। বিভাগের ৬ জেলার (পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি এবং বরিশাল) শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সাথে এবং বাস মালিক সমিতির নেতাদের সাতে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঝালকাঠি এবং বরিশালের বাস মালিক সমিতির মুখোমুখি এমন অবস্থানের কারনে উত্তেজনা বিরাজ করছে গোটা বিভাগজুড়েই।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ন্যায্য অধিকার পেতে তারা সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। যতক্ষণে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিবে না বরিশাল বাস মালিক সমিতি ততক্ষনে তাদের একট্টা হওয়া মালিক সমিতি ঝালকাঠি ও পিরোজপুর এলাকায় বরিশাল বাস মালিক সমিতির কোন যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
আর বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছে, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি গায়ের জোরে কোন কিছু করতে গেলে তাদের প্রতিহত করা হবে। এর জবাবে ঝালকাটি বাস মালিক সমিতি ‘বসে বসে মার খাবে না, আজ থেকে পাল্টা মার দিবে’ বলেও হুমকি দিয়েছে। অর্থাৎ বরিশাল ও ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির বিরোধে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, পরিবহন নিয়ে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নলছিটির দপদপিয়া, রায়াপুরায় চলছে ভুড়িভোজ এবং আনন্দ উল্লাসের আয়োজন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে বাস ঢুকানোর সময়ে বরিশাল বাস মালিক সমিতি যদি বাধা দেয় তা প্রতিহত করতে সংর্ঘষের জন্য শতাধিক রিজার্ভ লোক রেখেছেন। আর তাদের জন্যই আয়োজন করা হয়েছে ভুড়িভোজের।
এদিকে বরিশাল বাস মালিক সমিতিও প্রস্তুতি নিচ্ছে ঝালকাঠি মালিক সমিতিকে প্রতিহত করার জন্য।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় আমরা আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। তারা তা ভ্রক্ষেপ করছে না। ফলে ১৯ তারিখ থেকে আমাদের মত করে আমরা বাস চলাচল শুরু করাবো। তিনি বলেন, এতে আমাদের কেউ মারধর করতে আসলে প্রয়োজনে মার খাবো, তবুও দাবি বাস্তবায়ন করবো।
ওদিকে ঝালকাঠির সকল দাবি ভিত্তিহীন বলে বরিশাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি গায়ের জোরে কথা বলছেন। মূলত তারা বরিশাল বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি সুবিধা ভোগ করেও বর্তমানে কতক রাজনৈতিক নেতাদের মদদে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
শিপন বলেন, নিয়ম ভেঙে ঝালকাঠি কিছু করতে গেলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আজ (১৮ ডিসেম্বর) বিভাগীয় কমিশনার নিজে মুঠোফোনে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতিকে অনুরোধ করেছিলেন যেন ঝালকাঠি-বরিশালের অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
যেহেতু ২০ ডিসেম্বর তাদের জন্য সমন্বয় সভার আহ্বান করেছেন। শিপন দাবি করেন, বিভাগীয় কমিশনারের অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা তাদের অবরোধ চালিয়েছেন।
এদিকে বরিশাল বাস মালিক সমিতির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ঝালকাঠি ১৯ ডিসেম্বর রায়াপুরা থেকে বাস চালু করলে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বাস ধর্মঘটের ডাক দিবে বরিশাল বাস মালিক সমিতি।
পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ মৃধা ঝালকাঠির অবরোধকে যুক্তিহীন দাবি করে বলেন, আমাদের সমন্বয় বরিশাল এবং বরগুনা বাস মালিক সমিতির সাথে। এর বাইরে আমাদের রুটে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না।
পিরোজুপর বাস মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন নান্না বলেন, যেহেতু ঝালকাঠি অতিক্রম করে আমাদের চলাচল করতে হয়। সে কারনে ঝালকাঠি জেলার নেতাদের সাথে সাংর্ঘষিক কোন সিদ্ধান্তে যাবো না।
বরগুনা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ঝামেলাটা বরিশাল এবং ঝালকাঠির। তবে সমন্বয় ছাড়া নতুন করে কেউ আমাদের রুটে প্রবেশ করতে পারবে না।
আর ঝালকাঠি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, আমরা সকল রুটে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত। কেউ বাধা দিলে সেখানেই জবাব দেওয়া হবে।”
শিরোনামবরিশালের খবর