বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু রোগের টিকার সফল পরীক্ষা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকেরা এই টিকার সফল পরীক্ষা করেছেন। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন- ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪।
টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গেছে, চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই এই টিকা অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাফল্য দেখিয়েছে। টিকার এই সফল পরীক্ষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘ল্যানসেটে’ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে। এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে টিভি-০০৫ (টেট্রাভেলেন্ট)। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।
আইসিডিডিআরবির বলছে, গবেষণায় ব্যবহৃত এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায়, এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। গবেষকরা ২০১৫ সালে ‘ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ’ (ডিডি) নামক গবেষণা শুরু করেন। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ২০১৫ থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ অবকাঠামো এবং প্রারম্ভিকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য আইসিডিডিআরবিতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়।
গবেষকরা ২০১৬ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের (১-৪৯ বছর) ১১২ জন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীকে চারটি ভাগে ভাগ করে ৩:১ অনুপাতে টিভি-০০৫ টিকা বা প্লাসিবো দিয়েছেন। এর পরের তিন বছর পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। টিকা দেওয়ার পরে বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে চারটি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি পাওয়া গিয়েছে। যদিও গবেষণাটি কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করা যায়নি।
আইসিডিডিআরবি জানায়, মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গু বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। সাধারণত ডেঙ্গুর চারটি ধারণ (ডেন ১, ২, ৩, ৪) বা সেরোটাইপ একক ভাবে বা সম্মিলিত ভাবে সক্রিয় থাকতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মৃদু লক্ষণে জ্বর এবং হাড়ের ব্যথা হয় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে শক, রক্তপাত এবং অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটে। যেকোনো সেরোটাইপই মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। তবে অন্য কোনো সেরোটাইপ দিয়ে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর আকার ও তীব্রতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ বছরের চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর। বাংলাদেশে এ বছর প্রায় দুই লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
এই টিকা গবেষকদের একজন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এটি একটি আশাব্যঞ্জক ঘটনা। যেহেতু দেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রকোপ চলছে, তার মধ্যে এটি একটি আশার খবর। তিনি বলেন, এই টিকার একটি ডোজই সুরক্ষা দিতে পারে। তবে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে এই টিকা নিয়ে।
কারণ, বাংলাদেশে এর দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল বা পরীক্ষা হয়েছে। টিকাটি ৪২টি বিভিন্ন ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে বিশ্বের নানা দেশে। ভারতের এর তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ডেঙ্গুর হাত থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে এর জোর সম্ভাবনা আছে। মোহাম্মদ শফিউল আলম ছাড়াও এই টিকা গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক, সাজিয়া আফরিন ও মো.মাসুদ আলম।