ছাত্রলীগ নেতা রেজা হত্যাকাণ্ড—–
৪ মাস পরে বীরের বেশে
জসিম-অসিম বরিশালে
ছাত্রলীগ নেতা রেজা করিম রেজা হত্যা মামলা নিয়ে একটি বিশেষ মহলের নাটকীয়তার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এই মামলার অন্যতম আসামি বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি দীর্ঘ ৪ মাস পর বরিশালের মাটিতে পা রেখেছেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সাথে একই বিমানে গতকাল তিনি বরিশালে আসেন। কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধণা জানিয়ে শো-ডাউন দিয়ে অবস্থানের বিষয়টি নগরবাসীকে জানান দেন।
বিবির পুকুর পাড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আ’লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম এবং মহানগর যুবলীগের আহবায়ক এ্যাডভোকেট নিজামুল ইসলাম নিজাম তাদের বরণ করে নেয়। সেই সাথে সেখানে একটি বিশাল আকারের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় জসিমের বরিশাল ছেড়ে অন্যত্র থাকার বিষয়টিও জানান দেয়া হয়। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আ’লীগের বিভাজনের বিষয়টি তুলে ধরে রেজা হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি বিশেষ মহলের করা রাজনীতির বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন জসিম। একই সাথে কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল¬াহকেও নিয়ে বিষাদগার করেন। ওই সমাবেশে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ানও সমালোচনামূলক বক্তব্য দেন।
জসিম-অসিমের বীরের বেশে বরিশালে অবস্থান বিভাজন আ’লীগের ওই গ্র“পটিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। বিশেষ করে তাদের এই শক্তপোক্ত অবস্থান দেখে ওই শিবিরটি ঘামও ঝরেছে। কারণ এই ছাত্রলীগ নেতা রেজা হত্যা মামলায় জসিমকে জড়াতে একের পর এক নাটকীয়তা চলছিলো। কিন্তু চলতি মাসের ৪ তারিখে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জসিমসহ ৫ জনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয় কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ। যে কারণে শেষাবধি জসিমকে আসামি করার রাজনীতি আর ধোপে টেকেনি।
কিন্তু জসিম-অসিমকে ঠেকাতে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। যে কারণে গতকাল বিমানবন্দর থেকে বরিশাল নগরীতে শতাধিক মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশকালেও বাঁধা প্রদান করা হয়। এমনকি জসিম অনুসারি এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর করে একটি পালসার মোটরসাইকেল কাশিপুর এলাকায় রেখে দেয় সাদিক অনুসারিরা। বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ ভূইয়া জানান, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে বিমানবন্দরে সংবর্ধণা দিয়ে নগরীতে ফেরার প্রাক্কালে সাদিক অনুসারিরা একাধিক স্থানে তাদের বাঁধা দেয়ার চেস্টা করে।
এমনকি তাদের এক কর্মীকে মারধর করে মোটরসাইকেল রেখে দেয়। খবর পেয়ে সংশি¬ষ্ট বিমানবন্দর থানা পুলিশ উদ্ধার করে সেই মোটরসাইকেলটি। সেই হামলায় কালাম মোল¬া নেতৃত্ব দিয়েছে বলে জানান এই ছাত্রলীগ নেতা। মূলত বরিশাল মহানগর আ’লীগ নেতা প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ গ্র“পটিকে ভাঙতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। সাদিক একটি গ্র“প তৈরি করে চাইছেন বরিশাল রাজনীতিতে হিরণ অনুসারিদের কৌশলে মাঠ ছাড়া করে তার নিয়ন্ত্রণে নিতে। যে কারণে রেজা হত্যা মামলাটিতে জড়িয়ে জসিমকে বরিশাল ছাড়া করার কৌশল নেয়া হয়।
সেই সাথে হিরণ অনুসারিদের দমাতে সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ানকেও দৌড়ের ওপরে রাখা হয়। মূলত চলতি বছরে মে মাসের প্রথম দিকে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজাকে দলীয়কর্মীরা অভ্যন্তরীণ জেরে কুপিয়ে হত্যা করে। সেই ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের নাম উলে¬খ করে ঘটনার পরদিন কোতয়ালি থানায় রেজার ভাই রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করে। কিন্তু এতে জসিমের নাম না থাকায় সেই অভিযোগটি সাদিকের চাপে তুলে নেয়া হয়।
পরবর্তীতে নতুন একটি এজাহার করে জসিমের নাম অন্তুভূক্ত করা হয়। এরপরই আইনী জটিলতা এড়াতে বরিশাল ত্যাগ করে জসিম। সেই সাথে বিরোধীদের চাপের মুখে অসিম দেওয়ানও বরিশাল ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু বরিশাল পুলিশের স্বচ্ছ তদন্তের কারণে সকল রাজনীতি ভেস্তে যাওয়ায় এ দফায় রক্ষা পান জসিম। যদদুর জানা গেছে, সাদিক অনুসারিরা জসিমকে মামলায় আসামি হিসেবে রাখতে এখনও কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন। বাদীকে ম্যানেজ করে পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে পদক্ষেপ রাখা হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হয় এখন সেটা দেখার বিষয়।
বরিশালের খবর