বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, ০২ অক্টোবর ২০১৬
বরিশাল: নগরীর একটি নির্ধারিত এলাকায় ব্যাটারি চালিত হলুদ অটোরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গ্যাস চালিত ১৮৮টি নীল অটোরিক্সা চলাচলের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও এর বিপরীতে আপত্তি তুলেছে রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
গতকাল অশ্বিনি কুমার হলের সামনে আয়োজিত তাদের সম্মেলন থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবী জানিয়ে আন্দোলনের হুমকী দিয়েছে ওই সংগঠনটি। একই সাথে প্রশ্ন তুলেছে কার স্বার্থে খেটে খাওয়া অটোচালকদের পেটে লাথি দিয়ে নীল অটো চলাচলের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। তারা উচ্চ আদালতের আদেশকে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চরমোনাই পীর সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশে কোথাও উল্লেখ নেই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হলুদ অটো চলাচল করতে পারবে না।
তিনি এটিকে একটি বিশেষ চক্রান্ত উল্লেখ করে বলেন, প্রভাবশালী একটি মহলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে গ্যাস চালিত নীল অটো চলাচলের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। আর এর মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হচ্ছে প্রশাসন সহ প্রভাবশালী মহলটি। তিনি অবিলম্বে হলুদ অটোর বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলাচলের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার দাবী জানান।
এদিকে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, নীল অটো এক একটি পেট্রোল বোমার চেয়েও ভয়াবহ। কারণ এই গাড়ীগুলোতে যে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয় তা মোটেই গাড়ীর উপযোগী নয়।
তিনি বলেন, বাসা বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার ব্যবহার করে এই গাড়ীগুলো চালানো হচ্ছে। বাসা বাড়ীর সিলিন্ডার একটি বিশেষ পরিবেশে রাখতে হয়। কিন্তু গাড়ীতে সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরলে তা পরিবেশের কারণে গরম হয়ে যেতে পারে। একই সাথে সিলিন্ডার গুলো মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা তাও নির্ধারণ করা নয়। ওদিকে অতিরিক্ত গ্যাস পূর্ণ করা হলে বা ৫০ এমপিপির নিচে গ্যাস সিলিন্ডারে ঢুকালে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে।
অর্থাৎ ব্যবহারের দিক থেকে গাড়ীতে এই সিলিন্ডার গুলো মোটেই নিরাপদ নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গাড়ীতে ব্যবহৃত সিলিন্ডার আলাদা ভাবে প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে যেসব সিলিন্ডার গাড়ীতে ব্যবহৃত হচ্ছে তা এখন পর্যন্ত যদিও কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি তবে ঘটলে তা পেট্রোল বোমার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। এদিকে হলুদ অটো বন্ধ করে দেয়ায় নির্ধারিত ওই এলাকায় চলাচল করতে নগরবাসী পড়েছে ভোগান্তিতে।
চলাচলকারী যাত্রীদের অভিযোগ মতে নগরীর সদর রোড, চৌমাথা পর্যন্ত এবং জনাকীর্ণ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে শুধু গ্যাস চালিত নীল অটো এবং মাহিন্দ্রা চলাচল করছে। এখানে যে পরিমান লোকজন স্বল্প দুরত্ব হলেও চলাচল করে তার চাহিদা মাফিক যানবাহন পাওয়া যায়না। ফলে দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থেকে দু’একটিতে জায়গা করে নিলেও তাতে ভাড়া গুনতে দ্বিগুনেরও বেশী।
সদর রোডে গাড়ীর অপেক্ষায় থাকা রেজাউল করীমের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, নীল অটো তিন দফায় ভাড়া আদায় করে থাকে। তার ভাষ্যমতে এই গাড়ীগুলোতে উঠলেই ১০ টাকা করে গুনতে হয়। সময় সুযোগ পেলে তারা ২০ টাকা বা ২৫ টাকাও আদায় করে থাকে।
স্কুল শিক্ষার্থী সালমান জানান, জেল খানার মোড়ে প্রায় ২০ মিনিট দাড়িয়ে আছি। উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থী এই সালমান বলেন, কোন গাড়ীই পাচ্ছিনা। ফলে পায়ে হেটেই স্কুলে যেতে হবে। জানা গেছে, গ্যাস চালিত নীল অটোগুলোর লাইসেন্স দিয়েছে বিআরটিএ। আর এর চলাচলের রুট নির্ধারণ করবে পুলিশ প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন।
যদিও কিছুদিন পূর্বে গণমাধ্যমে মেয়র আহসান হাবীব কামাল বলেছিলেন, সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায় বৈধ্য অটোই চালাতে দেয়া হচ্ছেনা।
ওদিকে বরিশাল বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক শাহআলম জানায়, বরিশালে সরকারের নির্দেশ অনুসরণ করেই ১শ ৮৮টি গ্যাস চালিত অটোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২১ জুলাই সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলম টেলিফোনের এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, পৌর এলাকা ব্যাতীত সিটি নগরীতে গ্যাস চালিত অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রা চলাচলের কোন প্রকার অনুমতি মন্ত্রণালয় বা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দেয়নি।