বরিশাল: পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে এখন নদীপথে অবাদে বরিশালে নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবাসহ নানান ধরণের মাদকদ্রব্য। কক্সবাজারের একটি সিন্ডিকেটের সাথে এ অঞ্চলের কতিপয় ব্যক্তি যুক্ত হয়ে এসব মাদক নিয়ে আসছে। পরবর্তীতে মাদকের চালানগুলো বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে মজুত করা হয়। এরপরে বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই ব্যবসায় বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকজন ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে।
পুলিশ প্রশাসনকে মাস শেষে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে তারা নিরবে এই বিষ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। অবশ্য এর আগে একইভাবে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য কক্সবাজারে নিয়ে আসা হত। কিন্তু সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হওয়ায় কৌশল বদলেছে ব্যবসায়িরা। এখন নিরাপদ নদীপথে মাদক দ্রব্য নিয়ে আসা হচ্ছে বরিশাল ও আশপাশ জেলাগুলোতে। মঙ্গলবার এমভি রিফা নামক একটি ট্রলারভর্তি ৭ লাখ পিস ইয়াবাসহ এ অঞ্চলের ৩ ব্যবসায়ি গ্রেফতার হওয়ার পর র্যাবের কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। সেই সাথে আরও বলেছে কিভাবে গন্তব্য বদলে বরিশালে নিয়ে আসে মাদকদ্রব্য।
আটক এই ৩ ব্যক্তি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ তালুকেরচর দোহানী এলাকার মো. ফারুক (২৯), সামছুল (১৯) এবং আবুল হোসেন (৩৮)। এছাড়াও এই মাদকের চালান নিয়ে আসার সময় আরও ৪ জনকে আটক করা হয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। কিন্তু সাম্প্রতিকালে বরিশাল শহরে অবস্থান নিয়েছিল। এই ৪ জন হলেন নবী হোসেন (৩৮), ইসাক (৩০), শরিফ হোসেন (৩৭) ও নুরুল আমিন (৩৯)। চট্টগ্রাম র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহম্মেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগে মিয়ানমার থেকে ট্রলারযোগে কক্সবাজারে অবাধে ঢুকতো মাদকদ্রব্য। কিন্তু র্যাবের তৎপরতায় সাম্প্রতিকালে ২৫ লাখের বেশি ইয়াবা জব্দ করা হয়।
সেই সব ঘটনায় শতাধিক ব্যবসায়িকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। যে কারণে এই জেলায় মাদক নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয় এমন ভাবনা অনুমানে এনে ব্যবসায়িরা গন্তব্য বদল করেছে। তবে র্যাব সর্বদাই আশপাশ এলাকার নদীপথগুলোর ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছিল। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ট্রলারভর্তি ইয়াবা বরিশালে নিয়ে যাওয়ার পথে ৭ জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে আটকরাও স্বীকার করেছে রুট বদলে বরিশালে কীভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ে তা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। র্যাবের ভাষ্য হচ্ছে, এই চক্রটি এর আগেও নদীপথে ৩টি চালানে ৬ লাখ ইয়াবা বরিশাল, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিভাগীয় শহরে বরিশালে মজুদ করা হয়।
মাদক ব্যবাসায়িদের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য খোদ মিডিয়াকর্মীদেরও অবাক করেছে। এমতাবস্থায় বরিশাল পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য কে বা কারা এই ভয়ানক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তা নিয়েও অনেকের মনেও প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। কিন্তু এই মাদক সিন্ডিকেটের সাথে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সখ্যতার কোন তথ্য প্রকাশ করেনি আটকরা। তবে র্যাবকে জানিয়েছে, উপকূল অর্থাৎ বরগুনা, পিরোজপুর ও বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলায় মাদক নিয়ে আসার কৌশল। এমন তথ্য প্রকাশের পর বরিশালে পুলিশেও কানাঘুষা চলছে। এমতাবস্থায় এই মাদক প্রবেশরোধে উপকূল পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন সদ্য যোগদানকারী বরিশাল ডিআইজি শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান। যদ্দুর জানা গেছে, র্যাবের কাছে মাদক ব্যবসায়িদের স্বীকারোক্তির পরপরই গত রাতে উপকুল সংশি¬ষ্ট থানা বা ফাঁড়ি পুলিশকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশালের খবর