বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:১০ পূর্বাহ্ণ, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬
শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে তার টুঙ্গিপাড়ায়। ঢাকায় বসবাস ১৯৫৪ সাল থেকে। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এরপর আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ বছর দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুই দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৬৮ সালে বাবা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরে স্বামীর সঙ্গে প্রবাসে পাড়ি জমান তিনি।
১৯৭৫ সালের পট-পরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দলের হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।
এরপর থেকে ৩৫ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি গণতন্ত্রের মানস কন্যা হিসাবে উপাধি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়।
১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে, ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েকদফা গৃহবন্দি হয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এপর্যন্ত তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। ওই বছরের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন সরকার গঠন করে তারা। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়।দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর দ্বিতীয় মেয়াদের মহাজোট সরকার গঠিত হয়েছে। এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিনদফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ১৯৯৬-২০০১ সালে তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি, ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চলতি বছর দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দুটি পুরস্কার হলো ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও এজেন্ট অব চেঞ্জ আ্যাওয়ার্ড’ এর আগে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার- ২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডেল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কো’র ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হন শেখ হাসিনা।
গত সাত বছরের মত এবারও জন্মদিনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে নিউইয়র্ক অবস্থান তিনি। এখনও দেশে ফিরেননি । ৩০ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এবার জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রের বার্জিনিয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটবে শেখ হাসিনার।
বিভিন্ন দল ও সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন পালনের পূর্ব ঘোষণা দেওয়া হলেও, মঙ্গলবার বিকালে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মৃত্যুবরণ করায় শেখ হাসিনার নির্দেশে সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।