ঝালকাঠি: নলছিটিতে এক নারীর পরকীয়ার ঘটনায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির করতে গিয়ে উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যানের ভাগ্নে যুবলীগ নেতাসহ ৫ যুবক পুলিশের খাঁচায় আটকা পরেছে। বর্তমান স্বামীর দায়ের করা মামলায় ওই নারী ও তার প্রাক্তণ স্বামীসহ নলছিটির ৬জন অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলার আসামি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে আসামীদের উক্ত মামলায় ঝালকাঠি আদালতে সোপর্দ করলে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে- রাজশাহী বিভাগের বাঘমারা উপজেলার ধানগাছি এলাকার মৃত হামিদ প্রামানিকের ছেলে শফিকুল ইসলাম সুমনের সাথে ৮মাস আগে একই উপজেলার আলেকনগর এলাকার মুনসুর সরদারের মেয়ে মৌসুমী আক্তারের বিয়ে হয়। এই বিয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকে ২য় বারের মত বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।’
গত ৮ ডিসেম্বর মৌসুমী সুমনের সাথে ঝগড়া করে প্রাক্তণ স্বামী সোহেলের হাত ধরে নলছিটিতে পালিয়ে আসেন। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৌসুমীর নলছিটিতে অবস্থানের কথা জানতে পেরে সুমন তার স্ত্রীর খোঁজে সোমবার নলছিটি আসেন। মৌসুমীর মোবাইলে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুমন নলছিটি সরই এলাকায় আসলে মৌসুমীর প্রাক্তণ স্বামীসহ স্থানীয় ৫ থেকে ৬জন যুবক তাকে চোখ বেঁধে একটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখে।’
সেখানে আটকে রেখে মারধর করার পর সুমনের সাথে থাকা নগদ ৫হাজার ৫শত টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ওই চক্রটি। পরবর্তীতে ওই চক্রের সদস্যরা সুমনের কাছে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।’
সুমনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই মুক্তিপণ দাবির কথা তার পরিবারের সদস্যদের জানাতে বলে। চক্রটির কথা মত সুমন মুক্তিপণের বিষয়টি তার বড় বোন হাসনাহেনা বেগমকে জানায়। মুক্তিপণের দাবির কথা জানতে পেরে সুমনের চাচাত ভাই বাঘমারা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুলাহার প্রামানিক স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নলছিটি থানায় জানায়।’
বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেনে যাওয়ায় পুলিশ সুমনকে উদ্ধার ও অপহরণকারী চক্রটিকে গ্রেফতারে অভিযানে নামে। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার সরই এলাকার একটি বাসা থেকে ওই চক্রটিকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় সুমনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।’
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সুমন বাদী হয়ে নিজ স্ত্রী ও স্ত্রীর প্রাক্তণ স্বামীসহ ৬জনকে আসামী করে ৩৪১/ ৩৪২/ ৩২৩/ ৩৬৪/ ৩৮৫/ ৩৮৬/ ৩৪ ধারায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা (মামলা নং-১৬, তাং-২০/১২/১৬ইং) দায়ের করেছেন।’
মামলার আসামিরা হলেন- মৌসুমীর প্রাক্তণ স্বামী নলছিটির চর বারৈকরণ এলাকার মোবারক আলীর ছেলে সোহেল হাওলাদার, নাংগুলী এলাকার মৃত আসাদুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে নলছিটির উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান দুলাল শরীফের ভাগ্নে যুবলীগ নেতা মাহফুজ তালুকদার, একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সোহাগ খান, আজিজ হাওলাদারের ছেলে সুজন হাওলাদার, রানাপাশা গ্রামের মনির হাওলাদারের ছেলে আমিনুল হাওলাদার ও সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার।’
মামলা দায়েরের পর বুধবার দুপুরে আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। মামলার বাদি শফিকুল ইসলাম সুমন জানান মৌসুমী তার আপন মামাত বোন। সোহেলের সাথে ৩ বছর আগে মৌসুমীর বিয়ে হয়।’
পরবর্তীতে সুমনের সাথে মৌসুমীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে মৌসুমী ৮মাস আগে সোহেলকে তালাক দিয়ে সুমনকে বিয়ে করে। সুমনকে বিয়ে করার পর ফেইসবুক ও ইমোতে মৌসুমী সাইফুল নামে এক প্রবাসীর সাথে যোগাযোগ করার কথা জানতে পারলে সুমনের সাথে মৌসুমীর ঝগড়া হয়। এর জেরে মৌসুমী প্রাক্তণ স্বামী সোহেলের সাথে পালিয়ে নলছিটিতে আসে।’
এ খবর পেয়ে সুমনও স্ত্রীর খোঁজে নলছিটিতে আসলে আসামীরা তাকে বেআইনী ভাবে আটক করে মারধর করে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে।’
এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সুলতান মাহমুদ বলেন, মামলা দায়েরের পর আসামীদের বুধবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’