৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

নলছিটি থানার দুই পুলিশ সদস্যর বেপরোয়া ঘুষবানিজ্য

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫০ পূর্বাহ্ণ, ০১ ডিসেম্বর ২০১৬

অভিযোগ তদন্তের নামে জঙ্গি সাজানো  ও মামলার ভয় দেখিয়ে ৮ হাজার টাকা, ক্রোকী পরোয়ানার মালামাল জব্দ করার নামে ৫ হাজার টাকা এবং গভীর রাতে বাড়ি থেকে ধরে এনে থানা হাজতে আটকে রেখে নির্যাতন করে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে পুলিশের দুই এএসআই এর বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ  দায়ের করেছেন নলছিটি থানার ক্ষতিগ্রস্ত তিন ব্যক্তি। গতকাল ৩০ নভেম্বর নলছিটি থানার এএসআই নেয়ামত উল্লাহ ও এএসআই শামীমের(বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে এস আই) বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি অভিযোগ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে মহা পুলিশ পরিদর্শক, বরিশালের ডিআইজি ও ঝালকাঠীর পুলিশ সুপারের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের নিকট প্রদত্ত সাক্ষাতকার ও লিখিত অভিযোগে নলছিটি থানার কুশঙ্গল গ্রামের মৃত্যু মালেক হাওলাদারের পুত্র মোঃ  হাবিবুর রহমান জানান, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে একই বাড়ির আক্কাস মোল্লা গত ৯ অক্টোবর নলছিটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার জিডি নং-৩৩৪ । নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) অভিযোগ পেয়ে এএসআই শামিমকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলে ১০ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে এএসআই শামিম, নেয়ামত ও ছালেম সিভিল পোশাকে বাড়ির সামনে গিয়ে হাবিবুর রহমানকে ডাকেন। এসময় নেয়ামত ও শামীম হাবিবুর রহমানের সাথে দুর্ব্যবহার ও অকথ্য গালাগাল করতে থাকলে তার কলেজ পড়–য়া ছেলে শফিকুল কৌশলে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণের চেষ্টা করে। বিষয়টি এএসআই নেয়ামত দেখতে পেয়ে মোবাইলটি নিয়ে শফিকুলের জামার কলার ধরে টেনে হিচড়ে ৪/৫ টি চড়-থাপ্পড় মেরে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মটরসাইকেলে ওঠায়। ওই সময় হাবিবের বৃদ্ধা মাতার সাথেও নেয়ামত দুর্ব্যবহার করে। পরে জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে শফিকুলকে ছেড়ে দেয় । তখন নেয়ামত ও শামীম তাদেরকে জঙ্গি সাজানোর হুমকি ও মামলার ভয় দেখায়।  ওই দিন সন্ধ্যায় ২০ হাজার টাকা নিয়ে থানায় দেখা করতে বলেন তারা। সন্ধ্যায় নলছিটি পুলিশ ফাড়ির সম্মুখে চায়ের দোকানে অনেক দফারফা করার পর নেয়ামত ও শামীম ওই এলাকার  ইউনুছ মহুরীর মাধ্যমে ৮হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথা জানতে পেরে নেয়ামত ও শামীম ক্ষমা প্রার্থণা করে টাকা ফেরত দেওয়ার পায়তারা চালায় বলে জানা গেছে। অপরদিকে বরিশালের রূপাতলী আদর্শ সড়কের মৃত্যু হাজী আঃ মন্নানের পুত্র শাহ আলম বাচ্চু জানান, তিনি বরিশালের মেট্্েরাপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি/আর-৭১৯/১৫ মামলা দায়ের করলে আদালত নলছিটি থানার দপদপিয়া গ্রামের মৃত্যু কাঞ্চন আলী খানের পুত্র মোকলেছুর রহমান নান্টুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ও পরবর্তীতে মাল ক্রোকের নির্দেশ জারি করেন। নলছিটি থানার ওসি এব্যাপারে  এএসআই নেয়ামতকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি মালামাল ক্রোক করতে বাদির কাছে  ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করলে শাহ আলম তাকে ৫ হাজার দেয়। কিন্তু নেয়ামত মালামাল ক্রোক করতে গিয়ে আসামী পক্ষের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে কোন কিছু পাওয়া যায়নি বলে আদালতে প্রতিবেদন দায়ের করেন। পরবর্তীতে ৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে নেয়ামত মামলার বাদি শাহ আলম বাচ্চুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, ভয়ভীতি প্রদর্শণ ও বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন,‘আমি রাষ্ট্রপতির পদকপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার। আমি থানার ইনচার্জ,আমি যা বলব ও যা করব তাই হবে’। এদিকে  নলছিটি থানার অভয়নীল গ্রামের মৃত্যু আইয়ুব আলী খানের পুত্র ভ্যান চালক মোঃ  মিন্টু খান জানান,তার পুত্র লিয়ন খান গত ২০সেপ্টেম্বর বরিশালের ২১নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসের মাধ্যমে বিয়ে করে গত ২৭সেপ্টেম্বর সিদ্ধকাঠী  গ্রামে তার শ্বশুর হারুন খানের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওই দিন রাত ১১ টার দিকে নলছিটি থানার এএসআই নেয়ামত ও মিজান দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় নেয়ামত নববিবাহিত  লিয়ন খান ও তার স্ত্রী হাফছা আক্তারকে লাঞ্ছিত করে একটি মোবাইল ফোন ও টর্চ লাইট ভেঙ্গে ফেলেন। কোন প্রকার অভিযোগ ছাড়াই গভীর রাতে লিয়ন খান, হাফছা আক্তার ও তার মা জরিনা বেগমকে মহিলা পুলিশ ছাড়াই নেয়ামত ও মিজান থানায় এনে হাজতে রাখে। বাল্য বিবাহের কথা বলে বিভিন্ন মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রথমে ১লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করলেও দফারফা করে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে ২৮সেপ্টেম্বর  ১২ হাজার টাকা প্রদান করে বাকী ১৮ হাজার টাকা পরের দিন দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দিয়ে সন্ধ্যায় থানাহাজত থেকে মুক্তি পায় । পরের দিন ভ্যান চালক মিন্টু খান ১৮ হাজার টাকা জোগাড় করতে না পেরে এএসআই নেয়ামতের নিকট ফোন দিয়ে ১০ হাজার টাকার জোগাড় হয়েছে জানালে  তিনি অকথ্য গালাগাল করেন। তখন ভ্যান চালক ও তার স্ত্রী একজন সাংবাদিকের পরামর্শে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তিনি ওসিকে ফোন দিলে অনেক নাটকীয়তার পরে ঘুষের বাকী ১৮ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়নি ওই ভ্যান চালককে। অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে নলছিটি থানার এএসআই নেয়ামত উল্লাহ ও শামীমের সাথে যোগাযোগের করা হলে তারা বলেন,অভিযোগের বিষয়গুলো সত্যি নয়। আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

19 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন