১ min আগের আপডেট সন্ধ্যা ৬:৪৯ ; বুধবার ; নভেম্বর ২৯, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

নামে ২ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু…

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬

উজিরপুর: স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার গেজেট-স্মৃতিফলকে নাম থাকলেও ভাতার তালিকায় এখনও নাম নেই বরিশালের উজিরপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো: নুরুল হক হাওলাদার ও আ.মজিদ হাওলাদারের। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজও তারা পায়নি স্বীকৃতি-সম্মাননা। দেশ স্বাধীনের পর ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে সরকারী অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিল ও বরিশালের উজিরপুরের দশজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে উপজেলা পরিষদের সামনে স্মৃতিফলক নির্মান করা হয়। ওই ফলকের দ্বিতীয় নামটি হচ্ছে মোঃ নুরুল হক হাওলাদার ও চতুর্থ নামটি হচ্ছে আ.মজিদ হাওলাদারের।

স্মৃতিফলকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নুরুল হক হাওলাদার ও আ.মজিদ হাওলাদারের নাম দুটি শুধু স্মৃতি হয়ে থাকলেও সরকারের দেয়া মাসিক ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এই দুই শহীদের অসহায় পরিবার। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক মোঃ নুরুল হক হাওলাদারের অসহায় বিধবা কন্যা ফেরদৌসি বেগম তার বাবা এবং আ.মজিদ হাওলাদারের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা স্ত্রী তার স্বামীর নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে সরকারী সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র শক্তি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে যশোরের কালীগঞ্জের বয়রা এলাকায় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ব্যারাকপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক।

ওই যুদ্ধে ঘটনাস্থলেই শহীদ হয়েছিলেন নুরুল হকের সহকারী আবুল হোসেন হাওলাদার। উজিরপুর উপজেলার হস্তিশুন্ড গ্রামের আব্দুল আজিজ হাওলাদারের পুত্র তৎকালীন বিমান বাহিনীর কর্পোরাট অফিসার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক হাওলাদারের জেষ্ঠ কন্যা বিধবা ফেরদৌসি বেগম বলেন, বাবার লাশ কোথায় দাফন করা হয়েছে আমরা তা আজো জানতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, বাবার মৃত্যুর পর আমাদের তিন ভাই ও তিন বোনকে নিয়ে মা নুরজাহান বেগম চরম আর্থিক দৈন্যতায় পরেন। একপর্যায়ে বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় ১৯৯০ সালে মা মারা যান। বিধবা ফেরদৌসি বেগম আরও বলেন, আমার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিতা নুরুল হক হাওলাদারকে সম্মান জানিয়ে সরকারী অর্থায়নে উপজেলা পরিষদের সামনে বিশাল নামের স্মৃতিফলক করা হলেও আজও আমরা সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে আমার বাবার নাম থাকা সত্বেও আমরা মাসিক ভাতাও পাচ্ছিনা।

এজন্য আমিসহ অন্যসব ভাই ও বোনেরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দীর্ঘদিন ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল পাইনি। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে আ.মজিদ তালুকদার তার একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে ছালেক (চুন্নু)’র বয়স যখন এক থেকে দেড় বছর তখন শিশু সন্তান ও স্ত্রী পরিবার ছেড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে। অংশগ্রহন করেন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি যুদ্ধে। তার সহযোদ্ধারা জানান, আ.মজিদ হাওলাদার যুদ্ধে কখনও পিছু হটেনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে (৯ই রমজান) তৎকালীন ভোলার মহাকুম্মা বর্তমান ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের লেজপাতা নামক গ্রামে পাকহানাদের সাথে দিনব্যাপী মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। ওই সম্মুখযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে তিনি (মজিদ) ও আরও দুই সহযোদ্ধা শহীদ হন এবং তাদের রক্তের বিনিময়ে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

তার পরপরই দাসবাড়ীতে তিন শহীদদের দাফন করে সহযোদ্ধারা অন্য অপারেশনের জন্য স্থান ত্যাগ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে বিজয়ের পরে এলাকার সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে আসলে তাদের কাছ থেকে তার স্ত্রী সামসুন্নাহার বেগম জানতে পারেন স্বামী (মজিদ) মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাকে ভোলার বর্তমান দৌলতখান উপজেলার দাসবাড়ীতে দাফন করা হয়েছে। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মুন্ডপাশা গ্রামের আ.মজিদ হাওলাদার দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। সে ওই এলাকার মৃত: কসিম উদ্দিনের পুত্র। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আ.মজিদের রেখে যাওয়া সেই কিশোরী বধূ সামসুন্নাহার এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধা। বয়সের ভারে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একমাত্র প্রতিবন্ধী পুত্র ও সেই পুত্রের ঘরে জন্ম নেয়া আরেকটি প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে অভাব অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তার একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে ছালেক (চুন্নু) জানান, আমি তো যুদ্ধও দেখিনি আর বাবাকেও দেখিনি। আমার বাবার কোন ছবিও নেই।

মা বলেছে বাবা আমাকে ছোটবেলায় কোলে নিয়ে অনেক আদর করতো। আমার বয়স দেড় বছর তখন বাবা যুদ্ধে যায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলে সবাই বাড়ী ফিরে আসলেও আজও ফিরে আসেনি বাবা। তবে শুনেছি উপজেলা চত্বরে ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর .এম.এ জলিলের ভাস্কর্যসহ একটি শহীদদের নামের তালিকার স্মৃতিফলক রয়েছে। সেখানে নাকি আমার বাবার নামও আছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মজিদের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা স্ত্রী সামসুন্নাহার মৃত্যুর আগে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি-সম্মাননা দেখে যেতে চান। তার পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী একমাত্র প্রতিবন্ধী পুত্র শিশুটিসহ দুই মেয়ে নিয়ে অভাব-অনটন ও দু:খ-দুদর্শায় পার করেছেন জীবনের অনেকগুলো বছর।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মজিদের বৃদ্ধা স্ত্রী জানান, স্বামীর সহযোদ্ধাদের নিকট থেকে কবরের কথা জানতে চাইলে তারা আমাকে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের লেজপাতা গ্রামের দাসবাড়ীর ঠিকানা দেন। আমি আমার এক আত্মীয়কে নিয়ে ওই ঠিকানায় গিয়ে জানতে পারি দাসবাড়ী বিক্রি হয়ে গেছে। সেটা এখন স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন মাষ্টারের বাড়ী। মাষ্টারের ছেলে শামীমের কাছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের কবরের কথা জানতে চাইলে তিনি তার বাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাঁশের ঝোপ দেখিয়ে বলেন এখানে তিন মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেয়া হয়েছে বলে আমি শুনেছি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার এই বৃদ্ধা স্ত্রী সামসুন্নাহার বেগম এ সকল তথ্য দিয়ে সংবাদকর্মীদের কাছে সর্বশেষ কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, স্বামী হারিয়েছি ৪৩ বছর কিন্তু আজও পায়নি স্বামীর শহীদ স্বীকৃতি। স্বামী হারানোর পরে প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে দিন কাটিয়ে বিভিন্ন অফিসে গিয়েছি।

দ্বারস্ত হয়েছি বিভিন্ন মানুষের কাছে,হাজারো বার গিয়েছি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসে। মাসের পর মাস বছরের পর বছর কেটে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের আশার বানী শুনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজও পেলাম না আমার স্বামীর শহীদ সম্মাননা। স্মৃতিফলকে আর গেজেটে স্বামী (মজিদ)’র নাম থাকলেও ভাতা তালিকায় নাম নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার হারুন অর-রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মো: নুরুল হক হাওলাদার ও আ.মজিদ হাওলাদার দু’জনই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তাদের স্বীকৃতি ও ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে চেষ্টা চালাচ্ছি।

বরিশালের খবর

আপনার ত লিখুন :

 

ই বিের ও সা
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  হিজলায় নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন পত্র দাখিল সম্পন্ন  বরিশালে মিছিল থেকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কসহ গ্রেপ্তার ৫  আমিই আওয়ামী লীগের অরিজিনাল প্রার্থী: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী  পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়ার নৌকার মাঝি আশরাফুর রহমানের মনোনয়নপত্র দাখিল  মঠবাড়িয়ায় স্বামীর ঋণের বোঝা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ৩ সন্তানের জননী  বামনায় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে ফুলেল শুভেচ্ছা  কলাপাড়ায় ৪০ জন নারী পেলো সেলাই মেশিন  আমতলীতে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু  প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা পদ থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পদত্যাগ  ভোটের তারিখ বদলে তফসিল পেছালে মানবে না আ.লীগ