বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৮:০৬ অপরাহ্ণ, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯
বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: নতুন সড়ক আইন কার্যকর হলেও তা প্রয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। রাজধানীর ট্রাফিক সার্জেন্টরা বলছেন, কেউ আইন ভাঙলেই মামলা দেওয়া যাচ্ছে না। তার আগেই বিভিন্ন মহল থেকে ফোন দিয়ে তদবির করা হচ্ছে। এমন এমন জায়গা থেকে ফোন আসে তাদের কথা উপেক্ষা করার সম্ভব হয় না।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামটর মড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, দায়িত্বরত এক সার্জেন্ট একটি মালবাহী পিকাপকে থামিয়ে রেখেছেন। গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাওয়ার আগেই এক নেতার পরিচয় দিচ্ছেন। এরপরেও সার্জেন্ট জোর করেই কাগজপত্রগুলো হাতে নিয়ে দেখেন গাড়িটির টেক্সটোকেনের সময় পার হয়ে গেছে তবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক আছে। এরপরেই মামলা দিতে গেলে সেই নেতার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেন।
এ সময় সার্জেন্ট বলেন, এই ফোন হচ্ছে যত নষ্টের মূল। অবশেষে পিকাপটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি।
নাম প্রকাশ না কারা শর্তে সেই সার্জেন্ট জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য আইন প্রয়োগ জরুরি। কোন গাড়ি ট্রাফিক আইন ভাঙলেই বিভিন্ন মহল থেকে ফোন আসার কারণে অনেক সময় মামলা দেওয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, যারা ট্রাফিক আইন ভাঙে তাদের জন্যই বড় বড় ব্যক্তিরা ফোন করে। এই নেতাদের ফোনে আমরা বিরক্ত বোধ করছি কিন্তু পরিত্রাণের উপায় দেখছি না।
এদিকে নতুন সড়ক আইনে জরিমানার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই সমস্যা আরও বেড়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। আগেও বিভিন্ন মহল থেকে মামলা না করার অনুরোধ আসলেও এখন তা বহুগুণে বেড়েছে। এর ফলে সড়কে আগের চেয়ে যানজট কম হলেও এর থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এই একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে যাত্রীবাহী লোকাল বাসের ক্ষেত্রেও। তারা নিয়মের বাহিরে গিয়ে যাত্রী উঠানামা করলেও অধিকাংশ সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারা আইন ভাঙলেই লাইনম্যানরা এসে তদবির শুরু করে।
ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক ডেপুটি কমিশনার জয়দেব চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আমাদের উদ্দেশ্য মামলা দেওয়া না, আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। কেউ যদি একবার ভুল করে তা স্বীকার করে অনেক সময় মামলা দেওয়া হয় না।
লোকাল বাসের ব্যাপারে কমিশনার বলেন, তারা যে নিয়ম মানছেন না ব্যাপারটা এমন না, কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধান করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে এমন একটি আইন করা হয়েছে যা জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। এই পরিমাণ টাকা চালকরা দিতে পারবে কিনা সেটা বিবেচনা করা হয় নাই। যার ফলে এই আইন কার্যকর করা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে আমরা চাই যেভাবেই হোক সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। সড়কে যদি ঠিকমত আইন প্রয়োগ করা যেত তাহলে যানজট থাকত না।
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করে সরকার। নতুন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সড়কে আইন লঙ্ঘন করলে আজ থেকেই নতুন আইনে সাজা দেয়া হবে। নতুন এ আইনে সব ধরনের সাজা বাড়ানো হয়েছে। নতুন আইনে ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গের জরিমানা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার, হেলমেট না পরলে জরিমানা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সিটবেল্ট না বাঁধলে, মোবাইল ফোনে কথা বললে চালকের সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে ৩ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন বছরের জেল হতে পারে। নতুন আইনে চালকদের লাইসেন্স পেতে অষ্টম শ্রেণি, সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। আইন ভঙ্গে জেল-জরিমানা ছাড়াও লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা যাবে। পুরো ১২ পয়েন্ট কাটা গেলে লাইসেন্স বাতিল।