বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
নৌকাপ্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে হট্টগোল, আ’লীগ কর্মীকে পেটাল কাউন্সিলরের লোকজন!
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের কর্মীদের মধ্যে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের লোকজন নৌকা প্রার্থীর কর্মী জিলানীকে গালিগালাজ করাসহ প্রকাশ্য শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। বৃহস্পতিবার সাড়ে ৮টার দিকে জাহিদ ফারুকের সমর্থক মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, আ’লী নেতা কেবিএস আহমেদ এবং আনিচ উদ্দীন শহীদের উপস্থিতিতে ১০ নম্বর ওয়ার্ড নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজালুল করিম বরিশালটাইমসকে জানান, তিনিসহ মহানগরের আরও দুই নেতা ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকাপ্রার্থীর কর্মীদের বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক আয়োজনে অংশ নেন। এবং নিজেদের মধ্যে বিরোধ ভুলে আগামীতে এক সাথে নৌকার পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান রাখেন। এসময় কাউন্সিলের লোকজন ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা জিলানীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ মারধর শুরু করে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ভাটারখালস্থ নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় দ্রুত ত্যাগ করেন।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জিলানী জানান, মহানগরের শীর্ষ নেতাদের সম্মুখে তাকে তৎকালীন বিএনপি নেতা কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের লোকজন গালিগালাজ করাসহ মারধর করেন। মহানগরের নেতা আফজালুল করিম এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গেলে, অপর দুই নেতা আনিচ উদ্দীন শহীদ এবং কেবিএস আহমেদের উপস্থিতিতে তার ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে কাউন্সিলের ছেলেসহ তাদের সহযোগীরা। বিষয়টি থানা পুলিশের পাশাপাশি নৌকা মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুককে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে, জানান জিলানী। হামলার সময় কাউন্সিলর জয়নালও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এই অনাকাঙ্খিত ঘটনায় নৌকা প্রার্থী সমর্থিত নেতা আফজালুল করিম বিব্রত এবং শংকিত হয়েছেন। তিনি জানান, বিষয়টি নৌকা প্রার্থী জাহিদ ফারুক এবং তার অনুগত মহানগর আ’লীগের একাংশের নেতারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
জানা গেছে, যার ওপর কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের লোকজন হামলা করেছে, সেই জিলানী বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটে নির্বাচিত নৌকাপ্রার্থী আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রেখে প্রসংশিত হয়েছেন। সঙ্গত কারণে তার ওপর সাবেক একজন বিএনপি নেতার হামলাকে খুব ভালো ভাবে গ্রহণ করেনি মেয়র খোকনের কর্মী-অনুসারীরা।
যদিও কাউন্সিলর জয়নাল এখন নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক বলে দাবি করছেন, দলীয়ভাবে তার কোনো পদপদবি না থাকলেও তিনি কখনও বরিশাল সদর আসনে নৌকাপ্রার্থী জাহিদ ফারুক আবার কখনও সিটি মেয়রের অনুসারী পরিচয় দেন, দিচ্ছেন।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, জিলানী আ’লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ, তাকে মহানগর আ’লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে লাঞ্ছিত করার বিষয়টিতে তারাও সংক্ষুব্ধ। এই ঘটনায় নব্য আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর জয়নাল এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে নৌকাপ্রার্থীর কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে।
তবে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়ার্ড কর্মী জিলানীর ওপর হামলার ঘটনার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং এতে তার কোনো লোকজন জড়িত নেই বলে দাবি করেন কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন।
কাউন্সিলরের এমন বক্তব্যে তুলে ধরা হলে নৌকাপ্রার্থীর কর্মী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আফজালুল করিম তার প্রেক্ষিতে বলেন, জিলানীকে গালিগালাজ এবং মারধর আমার সামনে, এমনকি আমি চলে যাওয়ার পরেও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি, নির্বাচনের আগে এই দ্বন্দ্ব মেটানো না গেলে সমস্যা আরও প্রকট হবে, মন্তব্য করেন আ’লীগ নেতা।
কাউন্সিলর জয়নালের লোক হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ড আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাস বলছেন, জিলানীকে কেউ মারধর করেনি, মহানগর আ’লীগের নেতা আফজালুল করিম আসন্ন নির্বাচনে তাকে ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়ার কথা তুলতে কাউন্সিলরের লোকজনরা কিছুটা উত্তেজিত হয়েছিল। পরবর্তীতে আফজালুল করিম চলে যাওয়ার পর তা মহানগরের অপর দুই নেতা আনিচ উদ্দীন শহীদ এবং কেবিএস আহমেদ মীমাংসা করে দিয়েছেন।
তবে ভুক্তভোগী জিলানী বলছেন, কাউন্সিলর জয়নাল এবং তার লোকজন মিথ্যে বলছেন। তার ওপর হামলা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরাসহ ব্যক্তি-বিশেষের মুঠোফোনে ধারন আছে।’