বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৭:২১ অপরাহ্ণ, ২৯ মে ২০১৬
বরিশাল: জেলার পায়রায় দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ধাপের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল কাজের জন্য মাটি পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চলছে দ্রুত গতিতে। এখানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এর পুরোটাই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে দক্ষিণাঞ্চল তথা বাংলাদেশে বিদ্যমান বিদ্যুৎ ঘাটতি হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাঁশখালীর ঘটনাকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যে সেখানে চালু করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ‘ননস্টপ সার্ভিস সেন্টার’। এ কার্যক্রমের অগ্রগতি সঠিকভাবে হলে ২০১৯ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
প্রকল্পটি ঘুরে জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা সমুদ্র বন্দরের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন ধানখালীতে নির্মিতব্য ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ধাপের কাজের বালুভরাট, মাটির দেয়াল, নদীর তীর রক্ষা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্লক, মাটির প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রকৌশলী আবদুস সোবহান জানান, প্রায় ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে খুব সহজেই কয়লা আমদানি করা হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পটি দেখভাল করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ওই প্রকল্পে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশলী মিঠুন শিকদার জানান, প্রকল্পের মূল কাজের জন্য চলতি বছরের গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরের পর এখন চলছে মাটি পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম। এজন্য বসানো হয়েছে চীনের তৈরি সয়েল টেস্টের আধুনিক মেশিন। নির্মাণ করা হচ্ছে সাব স্টেশন। যেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি সরবরাহ করবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন প্রকৌশলী শিপন জানান, রামনাবাদ নদীর তীরে ধানখালী ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের ১০০০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য এ প্রকল্পের ইতিমধ্যে ৯৮২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। দুই থেকে আড়াই হাজার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য নেওয়া হয়েছে নানামুখি কর্মসূচি।
এতকিছুর পরেও ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ খুশি হলেও ক্ষতিপূরণ না পাবার বেদনা আছে অনেকের। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জমিদাতা মো. বাহাদুর মাস্টার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করে নিয়েছে তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি দেড় একর জমির টাকা হাতে পেয়েছেন। সরকার প্রতি শতাংশ জমির মূল্য র্নিধারণ করেছে ৫ হাজার ৯০০ টাকা। কিন্তু এই টাকা হাতে পেতে তার অন্তত ৪০ বার জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়েছে। তাতে তার ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
জমিদাতা আব্দুল ছত্তার ফকির জানান, কর্তৃপক্ষ তার চার একর অধিগ্রহণ জমি নিয়েছে। জমির মূল্য বাবদ এখন পর্যন্ত তিনি কোনো টাকা হাতে পাননি। অধিগ্রহণ করা জমি থেকে তার বাৎসরিক উৎপাদিত ফসলাদি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেজন্য ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদে ‘নন স্টপ সার্ভিস’ চালু করেছে জেলা প্রশাসন। গত ৯ মে বিকেল ৪টার দিকে এই সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক সিদ্দিকী। ওই দিন ৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের হাতে চেক বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক।