পটুয়াখালীতে সন্তান প্রসবের সময় করা অস্ত্রোপচারের সাড়ে ৩ মাস পর পেট থেকে গজ বের করার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ মাকসুদা বেগমকে ৯ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
১৫ জানুয়ারির মধ্যে ক্লিনিক মালিক ৪ লাখ এবং ভুয়া চিকিৎসককে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে।
এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সামসাদ।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবুল। ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার মাকসুদা বেগমের পক্ষে শুনানি করেন ইমরান এ সিদ্দিক। আর ক্লিনিকের পরিচালক ও নার্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম।
মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট তোফায়েল সিকদারের (মিশু সিকদার) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আইলাদ হোসেন।
পরে আইনজীবী শামসুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন- বিষয়টি তদারকি করবেন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন।
এর আগে ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আত্মসমর্পণের পর ভুয়া চিকিৎসক অর্জুন চক্রবর্তী ওরফে রাজন দাসকে শাহবাগ থানায় সোপর্দের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওইদিন পরে ইমরান এ সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন- ভুয়া চিকিৎসক, ক্লিনিকের মালিক, নার্স ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পর আমরা ডেপুটি রেজিস্ট্রারের কক্ষে যাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাজনের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় বাউফল থানায় একটি মামলা আছে। যেহেতু এক অপরাধে দুই মামলা হয় না, তাই দুপুর একটার দিকে বিষয়টি কোর্টের নজরে আনি।
পরে কোর্ট রাজনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করতে নির্দেশ দেন। অপর তিনজনের বিষয়ে আদালত কিছু বলেননি। তবে ১৩ ডিসেম্বর এ বিষয়ে আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।’
এর আগে ওই ডাক্তারের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর ৬ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন হাইকোর্ট। কিন্তু তার আইনজীবী কয়েকদফা সময় নিয়ে তাকে হাজির করতে পারেনি।
এমনকি পুলিশও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে আদালতকে অবহিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। অবশেষে সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন অর্জুন চক্রর্বতী ওরফে রাজন দাস।
একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা।
শহিদ উল্লা জানান, ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিনমাস পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে প্রসূতি মাকসুদা বেগমের (২৫) পেট থেকে গজ বের করা হয়েছে।
মুমূর্ষু ওই নারীকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালীতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে।’
মাকসুদা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত মার্চে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তখন তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক।
মাকসুদার মা রোকেয়া বেগমের বরাত দিয়ে আইনজীবী শহিদ উল্লা বলেন, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার একমাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যান তারা।
চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুই মাস পর খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। তখন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। গত জুনে বরিশালে শেবাচিম হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। তখন আলট্রাসনোগ্রাফিতেও কিছু ধরা পড়েনি।
এরপর পটুয়াখালীতে এক চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ১২ জুলাই হাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রোপচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়।
এ ঘটনায় ২৩ জুলাই পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে তলব করে রুল জারি করেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। ১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাদের।
রুলে ওই ঘটনায় কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চান হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ৯ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
পরে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। সে প্রতিবেদনেই ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসের লাইসেন্সটি ভুয়া হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।’
শিরোনামবরিশালের খবর