পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়ক ২২ কিলোমিটার। কিন্তু তার মধ্যে মৎস্য বন্দর মহিপুর থেকে পাখিমারা বাজার পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার মহাসড়কের চরম বেহাল দশা। যতদূর চোখ যায় শুধু গর্ত আর গর্ত। যার ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকসহ জনসাধারণ। ঝুঁকি নিয়েই এখন এ সড়কে চলছে যানবাহন। মোটরসাইকেল, মাইক্রো-প্রাইভেটকার, অটোভ্যান-টমটম, নছিমন, করিমনসহ ছোট যানবাহনে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কের শরীরের ক্ষত স্থানে জোরাতালি অর্থাৎ ঘাঁয়ে মলম লাগিয়েছে কয়েকবার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ক্ষত এত গভীর থেকে শুরু হয়েছে যে বার বার খোয়া-বালু দিয়ে মেরামত করলেও কাজে আসছে না। বৃষ্টি হলেই যানবাহনের চাকায় মেরামতের মলম উঠে যায়। আবার যেই সেই অবস্থা।
ঠিকাদারের একটি মামলার কারণে সড়কটি সম্পূর্ণভাবে ফের টেন্ডার দিয়ে মেরামত করার সুযোগও নেই বলে দাবি করছে সওজ কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মৎস্য বন্দর মহিপুর থেকে পাখিমারা পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানের কার্পেটিং উঠে গেছে। বের হয়ে গেছে ইট-বালু-খোয়া। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সড়ক জুড়ে খানা-খন্দে একাকার। এছাড়া বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি জমে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। ফলে পণ্যবাহী যানবাহন, মাইক্রো-প্রাইভেট কার চলার সময় কাঁদাপানিতে ছিটে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা। পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-২০১৪ অর্থ বছরে এ সড়কের উন্নয়ন কাজ করে দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই কাজ মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় সওজ কর্তৃপক্ষ।
প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দু’টি দল তদন্ত করে গেছে। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুনগত মান ভাল হয়নি বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়। বিল আটকে দেয়ার প্রেক্ষিতে রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম পটুয়াখালী দেওয়ানী আদালতে ২০১৪ সালে একটি এবং ২০১৫ সালে দ’ুটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলার প্রেক্ষিতে পাখিমারা-মহিপুর অংশের ১১ কিমি সড়কের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন। যার ফলে গত তিন বছর ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে এ অংশের সড়কটি। তারপরও বিভাগীয় উদ্যোগে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে মহাসড়কটি পর্যটকের স্বার্থে সচল রাখা হচ্ছে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে পূর্ণাঙ্গভাবে টেন্ডার দিয়ে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। বাস চালকরা জানান, মহিপুর থেকে পাখিমারা পর্যন্ত যাওয়া আসা করতে গর্তের কারণে ধাক্কায় ধাক্কায় যাত্রীদের মাজা ভাঙে। বিশেষ করে যারা বাসের পিছনে থাকে তাদের অবস্থা হয় আরও খারাপ। মাঝে মাঝে বাসের ছাদের সঙ্গে থাক্কা খায়।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের তিনটি সেতু চালু হওয়ায় কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন বহুগুনে বেড়েছে। কিন্তু কুয়াকাটার জন্য এখন প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ১১ কিলোমিটার ভাঙা জোড়াতালি দেওয়া সড়ক। পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, মহিপুর থেকে পাখিমারা পর্যন্ত মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে করা যাচ্ছে না। আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে অথবা চলমান মামলার নিষ্পত্তি হলে তিন মাসের মধ্যে কাজটি করা সম্ভব।”
শিরোনামটাইমস স্পেশাল, পটুয়াখালি