পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ২০১৫-২০১৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িতরা এখনও চিহ্নিত হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রায় দেড় বছর পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গোপনে কমিটি গঠন করা হলেও তাদের কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
তদন্ত কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও ১০ মাসে পেরিয়ে গেলেও তারা তা জমা দেননি। এতে তদন্তের আলোর মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ঘটনার দেড় বছর পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুদ্দিনের কাছে একাধিকবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ জানালেও তার সময় এ বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি।
নতুন উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ ওই ঘটনা তদন্তে প্রফেসর আ.ক.ম মোস্তফা জামানকে সভাপতি ও প্রফেসর ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রফেসর ড. আবুল কাশেম চৌধুরী, প্রফেসর বদিউজ্জামান এবং প্রফেসর ড. মো. গোলাম রব্বানি আকন্দ। ১০ মাসে পেরিয়ে গেলেও তারা এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি। তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এই বাস্তবতায় অনুসন্ধানে জানা গেছে- ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বি-ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দুমকি, বাউফল, পটুয়াখালী সদর, আমতলী ও বরগুনা উপজেলায়। এসব এলাকা থেকে চান্সও পান রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী।
ওই বছর বিএএম অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থীর স্থায়ী ঠিকানা দুমকি, পটুয়াখালী ও বাউফলের রয়েছে অন্তত ১০ জন এবং বরগুনা, তালতলী ও আমতলী উপজেলারও রয়েছে অন্তত ১০ জন।
তবে এর আগের বছরগুলোতে এসব এলাকা থেকে এত শিক্ষার্থী চান্স পাননি। ভর্তি পরীক্ষায় বিএএম অনুষদে পরীক্ষার্থীরা এমন ফল করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল। তাদের মধ্যে এমসিকিউতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯০ এর অধিক নম্বর পেয়েছেন ৩২ জন। কিন্তু পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ৮০ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দু’একজন।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, ওই সেশনে প্রশ্নপত্র সহজ ছিল না, প্রশ্ন ফাঁসই শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর পাওয়ার মূল কারণ।
এদিকে ওই বছর রেকর্ড নম্বর পেয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তারা পরবর্তীতে বিভাগের পরীক্ষায় ভাল ফল করতে পারছেন না। মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি ১ম থেকে ৪র্থ সেমিস্টারের পরীক্ষায়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ১ম সেমিস্টারে ১৭ জন সব বিষয়ে ফেল, ১২ জন ৪ বিষয়ে, ৭ জন ৩ বিষয়ে ও ১৫ জন ২ বিষয়ে ফেল করেছেন।
তাদের মধ্যে ২য় সেমিস্টার শেষে মাত্র ১১ জন সব বিষয়ে পাস করেছেন। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁেেসর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অভিযোগ, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর শামসুদ্দিনের দুই পিএস নাঈম কাওসার ও হুমায়ন কবির আমিন এবং কম্পিউটার অপারেটর আবুল কালাম আজাদ এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন নাঈম কাওসার ও হুমায়ন কবির বরিশালটাইমসকে বলেন, প্রশ্ন তৈরি বা ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এতে আমাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। একই কথা বলেন, আরেক অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদও।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক উপাচার্যের পিএস নাঈম কাওসারের শ্যালক কেএম মেহেদি হাসান ও মাসুম বিল্লাহ’র প্রতিষ্ঠিত কোচিং সেন্টার আড়িয়াল এডমিশন এইডের বিরুদ্ধেও।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মেহেদি। তদন্ত কমিটির সভাপতি প্রফেসর মোস্তফা জামান বরিশালটাইমসকে বলেন, এটি প্রায় দুই বছর আগের এবং অত্যন্ত জটিল একটি ঘটনার তদন্ত। তদন্ত কার্যক্রম শেষের দিকে। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বরিশালটাইমসকে বলেন, তদন্ত কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েকবার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
শিরোনামক্যাম্পাসের খবর, পটুয়াখালি