পটুয়াখালি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) এলাকায় দিন দিন বহিরাগতদের উৎপাত বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে নিরিবিলি স্থানে তারা মেতে উঠেছেন অসামাজিক কর্মককান্ডে। আর এসব ঘটনায় বিব্রত ও একই সাথে ক্ষিপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পবিপ্রবি’র শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের ফেইসবুকেও এনিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
সম্প্রতি ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের এক বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেত্রীর সাথে তার বহিরাগত কথিত প্রেমিকের অন্তরঙ্গ ছবি ওই প্রেমিক যুগল নিজেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়ে ওঠে। ফেইসবুকে এ ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে দেখা যায় নানা মতামত। দাবি উঠেছে ক্যাম্পাসে সংগঠিত এসব ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার এবং প্রশাসনের বিশেষ নজরদারির। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন এলাকা,লাইব্রেরী ও ছাত্রী হলের সামনে চলে অসামাজিক কর্মকান্ড। বেড়ে যায় বহিরাগতদের আনাগোনা। তাদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে অভিসারে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আর এতে পুরো ক্যাম্পাস যেন পরিণত হয় রোমান্স এলাকায়। কপোত-কপোতিরা পাশাপাশি বসে মেতে উঠে অসামাজিক কর্মকান্ডে। আর এসব অন্তরঙ্গ দৃশ্য মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিছুদিন পূর্বে কয়েকজন কপোত-কপোতিদের অন্তরঙ্গতায় বিব্রত হয়ে শিক্ষকরা ওই প্রেমিক যুগলদের ডেকে তাদের শাসিয়েছেন বলে জানা গেছে। সে যাত্রায় ওই কপোত-কপোতিদের অভিভাবকদেরকেও বিষয়টি সস্পর্কে অবহিত করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। দুই জন অভিভাবক এ ব্যাপারে ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন। একাধিক অভিভাবক মোবাইলে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করেন।
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান দেখে কপোত-কপোতিরা কৌশল পরিবর্তন করে ছাত্রী হলের সামনে আড্ডা অনেকটা দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ক্যাম্পাসে রোমান্সের নামে নোংরামী অনেকটা বেড়ে গেছে বলে একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা সংলগ্ন এলাকায় কপোত-কপোতির অন্তরঙ্গতা দেখে ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরাও বিব্রত হচ্ছেন। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন,বহিরাগতদের অসামাজিক কর্মকান্ডের ফলে অবস্থা এমন হয়েছে,নিজের বাবাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে পারি না।
আমার হলের সামনে নিয়ে যেতে পারি না। অপরদিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা বসছে নিয়মিত। এসব মাদক আসছে বহিরাগতদের হাত থেকে। তাদের মাধ্যমে পৌছে যাচ্ছে আবাসিক হল গুলোতে। এমনকি আবাসিক হল গুলোতে ওই বহিরাগতরা নিয়মিত অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বহিরাগত অবাধ বিচরণ ঠেকাতে তেমন কোন পদক্ষেপ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়েল তরফদার(২৯) নামে এক বহিরাগত এই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। খুলনার ছেলে জুয়েল তরফদার প্রায়শই মাদকের চালান নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। তিনি এক হল নেত্রীর ছত্রছায়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান করে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেন। একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়,মাদক ব্যবসার পাশাপাশি কথিত ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর সাথে রোমান্স করতে জুয়েল ক্যাম্পাসে আসেন। সূত্র জানায়,জুয়েল তরফদারকে বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দেখা যেত মাদকসেবীদের সাথে। খুলনার ছেলে জুয়েলের ওই সব এলাকায় সন্দেহজনক গতিবিধির ব্যাপারে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হলে জুয়েল কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাস বলেন, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে।
কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করছি বহিরাগতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তারা যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরো বলেন, আবাসিক হলে যদি কোন বহিরাগত অবস্থান করেন,তবে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টরা ব্যবস্থা নিবেন। এটা তাদের দায়িত্ব।
খবর বিজ্ঞপ্তি, পটুয়াখালি, স্পটলাইট