পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম হোসেনের বিরুদ্ধে এক অনুষদের ডিনের স্বাক্ষর জাল করে চেক জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ওই ডিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। নাঈম হোসেন দুমকি উপজেলার লেবুখালী ফেরিঘাট এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেনের পুত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ৪র্থ সেমিস্টারের ছাত্র।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদ বিশ্বাসের স্বাক্ষর জাল করে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম হোসেন একটি চেক (হিসাব নং-১১১৮০, চেক নং-এসবিএলকিউ ২৬০০২০৪) জালিয়াতি করে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কর্তৃপক্ষের অনুকূলে প্রদেয় ৮ হাজার ২৮০ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানতে ওই ডিন ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
চেক জালিয়াতির বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ, জনসংযোগ বিভাগ এবং রূপালী ব্যাংক পিএসটিইউ শাখা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও নাঈমের বিরুদ্ধে পবিপ্রবির আইকিইউসি এর একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আরও ২৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ সেশনে কৃষি অনুষদে ভর্তি হন দুমকি উপজেলার লেবুখালী ফেরিঘাট এলাকার মো. নাঈম হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর থেকে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. হারুনর রশীদের দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি মহলের ইন্দনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে কতিপয় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ক্যাডারদের সহযোগিতায় আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নামেন নব্য এই ছাত্রলীগ নেতা।
কৌশলে ভিসি ও প্রশাসনকে বিপাকে ফেলে অবৈধ ফায়দা হাসিলের মিশন সে যাত্রায় সফল না হলে নতুন করে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন ছাত্র সমাজ থেকে ছাত্রলীগে আসা নব্য এ নেতা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অন্যান্য বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. শামসুদ্দীনকে ব্ল্যাকমেইল করে তার মেয়াদের শেষ সময় নাঈম তার আপন বোন মোসা. সীমাকে নার্স পদে চাকুরীর ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন কারণে সাবেক ওই ভিসির সঙ্গে নাঈমের সখ্যতা থাকার সুযোগে ওই সময়ে আরও বেশ কয়েকটি চাকুরীতে হস্তক্ষেপ করে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য করেন হালের আলোচিত এই নেতা।
এছাড়াও পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান আনিস ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমেদ রিমনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেন নাঈম। এ ঘটনার পর তিনি ওই কমিটি তাড়াহুড়ো করে ভেঙে দিতে জোরালো প্রচেষ্টা চালায়। এরপর নতুন কমিটিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক সহ-সভাপতির বদৌলতে ছাত্রলীগের পবিপ্রবি শাখা কমিটিতে নাঈম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক সিনিয়র নেতার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে সে কখনই ছাত্রলীগের কোন মিছিল বা অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেননি। তাকে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ট লোকদের সঙ্গেই সবসময় দেখা যেত।
কমিটি গঠনের ঠিক আগে মুহূর্তে সে হঠাৎ ছাত্রলীগ বনে গিয়ে ছাত্রলীগের একটি তাকে পদ বাগিয়ে নেয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত এই নাঈম কলেজ জীবনে জাতীয় ছাত্র সমাজ করতেন। স্থানীয় বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের অনুসারী হিসেবে ওই সময় স্থানীয় জনতা কলেজে ছিল তার একচ্ছত্র প্রভাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে নিজস্বার্থ হাসিল করতে লাইমলাইটে আসার জন্য বোল পাল্টে রাতারাতি ছাত্রলীগ নেতা বনে যায় তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করার পর নিজেকে তাদের নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন নাঈম।
এ নিয়ে ক্যাম্পাসে হাস্যরসের সৃষ্টি করলেও সুচতুর নাঈমের আত্মপ্রচারে তা প্রতিষ্ঠা পায়। বর্তমানে সাদী-রাকিবের নেতৃত্বাধীন পবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটিকেও চাপে রাখতে তার জোরালো অপচেষ্টা অব্যহত আছে।
এছাড়াও বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুনর রশীদের নেতৃত্বাধীন পবিপ্রবি প্রশাসনকে বিব্রত করতে তিনি একাধিকবার মিথ্যা সংবাদ প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমান ভিসির নিয়োগের শুরু থেকে নাঈম প্রশাসনের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলেও বর্তমানে তিনি ভিসির কাছে থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে তোড়জোর চালাচ্ছেন বলে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ।
এ ব্যাপারে মো. নাঈম হোসেন বলেন, বিজ্ঞাপনের একটি চেক হারিয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থি’তির সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।’
পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
পটুয়াখালি