১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

পলাতক আসামি ওসির পাশে!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩৩ অপরাহ্ণ, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

বরিশাল: ঝালকাঠির নলছিটিতে ওয়ারেন্টভুক্ত ক্ষমতাসীন দলীয় এক নেতা থানার ওসির পাশাপাশি থেকে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে তোলপাড় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সেই অনুষ্ঠানের ধারণচিত্র থানার ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করায় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড়। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও পুলিশ দায় এড়াতে বিষয়টি অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। শহরের কুড়িপট্টি এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা ফিরোজ ওরফে হাতকাটা ফিরোজ গত ১৫ নভেম্বর শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর জন্মদিনে থানার ওসি সুলতান মাহমুদের পাশে থেকে কেক কাটায় এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

পৌরসভায় সভাকক্ষে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে প্রধান ভূমিকায় থেকে কেক কাটেন মেয়র তসলিম উদ্দিন চৌধুরী। তার বাম পাশে পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ওসি সুলতান মাহমুদকে। আর অপর প্রান্ত অর্থাৎ মেয়রের ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি গোলাম মোস্তফা ফিরোজ। সেই চিত্র বরিশাল থেকে প্রকাশিত একাধিক পত্রিকায়ও উঠে আসে। যদিও সেইসব প্রতিবেদনে মন্ত্রীর জন্মদিনের বিষয়টি বেশি মাত্রায় প্রাধান্য পায়।

কিন্তু প্রথম সকালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫০ ছুঁই ছুঁই বয়সি ফিরোজ একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানভুক্ত আসামি। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা আ’লীগের নেতা ফিরোজ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশি¬ষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বিবাদী নিরাপরাধ প্রমানিত হয়। যে কারণে আদালতের বিচারক বাদি ফিরোজের বিরুদ্ধে স্বপ্রনোদিত হয়ে ২১১ ধারায় একই অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে মামলা (২৭/১৬) দায়েরের পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৩ আগস্ট নলছিটি থানা রেজিস্টারে (৫৭৩/১৬) নম্বরে পরোয়ানার বিষয়টি নথিভুক্ত হয়। কিন্তু এরপরে ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি ফিরোজকে। অথচ সেই ফিরোজ গত ১৫ নভেম্বর থানার ওসির পাশাপাশি থেকে পৌরসভায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফেলে দিলেন শোরগোল।

অথচ পুলিশ বরাবরই তাকে আড়ালে রেখে বলছে পলাতক রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলাম মোস্তফা ফিরোজ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা সন্ত্রাসের বরপুত্র। কিন্তু তাকে কেন গ্রেফতার না করে আড়ালে রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মধ্যে দানা বেঁধেছে। বিশেষ করে এই ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগের অনেক নেতাই পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ। তবে এই ফিরোজ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি পৌরসভা চেয়ারম্যান তসলিম চৌধুরীর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত হওয়ায় কেউ মুখ খুলছেন না। অবশ্য মেয়রও স্বীকার করেছেন ফিরোজ তার দলীয় লোক এবং কাছের মানুষ। কিন্তু মামলা মোকাদ্দমার বিষয়াদি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন বলে জানান। এমতাবস্থায় ওসির অভিব্যক্তি হচ্ছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা আসামির তালিকায় অনেকেই রয়েছে। কিন্তু ফিরোজের বিরুদ্ধে কোন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে কিনা কাগজপত্র না দেখে বলা যাচ্ছে না।

অথচ আসামি ফিরোজও স্বীকার করলেন তার বিরুদ্ধে একটি পরোয়ানা রয়েছে। তবে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা দেওয়ার পরে তিনি একবার জামিনে বের হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ধার্য্য তারিখে হাজির না হওয়ায় ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বলে জানান তিনি। ফলে পুলিশ যে তাকে ধরতে কতটা উদাসিন তা এখানেই বুঝতে বাকি থাকে না। স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চিহ্নিত অপরাধি ফিরোজ সর্বদায়ই থানায় আসা যাওয়া করেন। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনকভাবে তাকে আড়ালে রাখে। মুলত ক্ষমতাসীন আ’লীগ দলীয় নেতা হওয়ায় পুলিশের এমন ভূমিকা বলে দাবি সূত্রটির। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট থানার ওসি সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। কেননা অপরাধী যে দলেরই হোকনা কেন আদালতের নির্দেশ মানতে পুলিশ বাধ্য।

20 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন