বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের জগতচাদ গ্রামে সন্তোষ সরকার নামের এক দিনমজুরকে পাওনা টাকার জন্য ১১ দিন ধরে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমতলী থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে নির্যাতনের শিকার সন্তোষ সরকারকে উদ্ধার করেছে।
একই সাথে নির্যাতনকারী মন্টু হাওলাদারকে আটক করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হলদিয়া ইউনিয়নের জগতচাদ গ্রামের মুকুন্দ সরকারের ছেলে সন্তোষ চন্দ্র সরকার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ বিঘা জমি থাকলেও তা দেনার দায়ে বন্ধক রাখায় এখন সে ঢাকার ফতুল্লার আলী গঞ্জে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালায়। সংসারের অভাব মেটাতে না পেরে ৩ বছর আগে ২০১৪ সালে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ বিঘা জমি ওই একই গ্রামের মন্টু হাওলাদারের নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী (কট কবলা) সময়ের জন্য বন্ধক রাখেন।
তিন বছর পর চলতি ২০১৭ সালে গোপনে ওই জমি থেকে জগতচাদ গ্রামের মনু হাওলাদারের নিকট দেড় বিঘা জমি কবলা দেন। বাকী আড়াই বিঘা জমি তার দুই ভাই মনোতোষ সরকার ও প্রান্ত সরকার জোরপূর্বক ভোগ দখল করায় মন্টু হাওলাদার তার দেয়া ১ লাখ টাকা সন্তোষ সরকারের নিকট দাবি করেন। জমি বিক্রির পর সন্তোষ মন্টু হাওলাদারকে ২৬ হাজার টাকা প্রদান করেন। এর পর ৭৪ হাজার টাকা বাকী থাকায় মন্টু হাওলাদার এ টাকা পরিষোধের জন্য সন্তোষ সরকারকে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করে আসছে।
মন্টু হাওলাদার ও তার শ্যালক ইমরান খানের সহযোগিতায় তার ৭৪ হাজার টাকা আদায়ের জন্য এক পর্যায়ে গত ২ এপ্রিল ঢাকার ফতুল্লার আলীগঞ্জ থেকে স্ত্রী সন্তানের সামনে থেকে সন্তোষ সরকারকে ধরে এনে নিজের বাড়ির একটি খুপরি ঘড়ে আটকে রাখেন। আটকের পর মন্টু হাওলাদার ও তার শ্যালক সন্তোষের পায়ে শিকলে বেঁধে প্রতিদিন নির্যাতন করেন।
সন্তোষ সরকারের স্ত্রী পূর্ণিমা রানী সরকার বরিশালটাইমসকে জানান, ঢাহা গোনে মোর স্বামীরে ধইরা আনার পর পরের দিন মুই বাড়ি আইয়া মন্টু হাওলাদারের পায় আতে ধইরা মোর স্বামীকে ফেরত দেওয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করি। হে মোর কথা না হুইন্যা আরও মোরে বকা বকি কইরা তারাইয়া দেয়। মুই হের ভয়ে গ্রাম ছাড়া অইয়া থাহি। ভয়ে কোন লোক জনেরে জানাই নাই।’
এভাবে সকলের অজান্তে দেনার দায়ে ১১ দিন ধরে আটকে নির্যাতনের খবর পেয়ে আমতলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মস্তফা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একদল পুলিশ নিয়ে মন্টু হাওলাদারের বাড়ির বন্দিদশা থেকে সন্তোষ সরকারকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় থেকে উদ্ধার করেন। এসময় পুলিশ নির্যাতন কারী মন্টু হাওলাদারকেও আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
নির্যাতনের শিকার সন্তোষ সরকার জানান, “জমির টাহা ফেরত না দেওয়ায় মন্টু হাওলাদার মোরে ২ এপ্রিল ঢাহা গোনে ধইরা আইন্না হের বাড়ির একটা ঘড়ে পায়ে শিকল দিয়া বাইন্দা রাহে। হেরপর হ্যার হালায় ও মন্টু হাওলাদার মোরে মাইর ধইর করত। হেরপর বাইন্দা রাহা অবস্থায় মোরে ঠিক মত খাইতে দিত না। মুই প্যাডের ক্ষিদায় কানতাম।’
মন্টু হাওলাদার জানান, পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সন্তোষ সরকারকে আটক করে রাখা হয়েছে। তবে পালিয়ে যাওয়ার ভয়ে দিনে নয় রাতে ঘড়ে শিকলে বেধে রাখতাম। নির্যাতন এবং খাবার না দেওয়ার প্রশ্নে বলেন, কোন নির্যাতন করা হয়নি। এবং সবসময় খাবার দেয়া হত।’’
উদ্ধারকারী আমতলী থানার এসআই মো. মস্তফা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হলদিয়া ইউনিয়নের জড়তচাদ গ্রামের মন্টু হাওলাদারের বাড়ী থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে সন্তোষ সরকারকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদুল্লা বরিশালটাইমসকে জানান, পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সন্তোষ সরকারকে ঢাকা থেকে ধরে এনে বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নির্যাতিত সন্তোষ সরকারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবং নির্যাতন কারী মন্টুকেও আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্ততি চলছে।”
শিরোনামবরগুনা