বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:০৮ পূর্বাহ্ণ, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে পাতানো নির্বাচন আখ্যা দিয়ে তা প্রতিহত করতে সাধ্যমতো ইসলামী আন্দোলন চেষ্টা চালাবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করিম। বলেছেন, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন অনড় রয়েছে। নির্বাচনে নিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে চাপ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন গাদ্দারি করতে পারে না।
জাতীয় দৈনিক মানবজমিন’র সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওই পত্রিকার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে যারা নির্বাচনমুখী সংগঠন তারা তো জনগণের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে অবরোধ ভাঙচুর হরতাল ভায়োলেন্স করা রক্তপাত ঘটা এগুলো তো আসলে কাম্য না। জনগণ যাদের পক্ষে সরকার তারাই গঠন করবে। জনগণ যাদের পক্ষে না তারা সরকার গঠন করবে না। এটাই তো আমাদের সংবিধানের দাবি। আজকের যারা ভোটার হয়েছে তারা ভোট দিতেই পারে নাই আজ পর্যন্ত। তারা ভোট দিতে চায়।
তারা তাদের পছন্দের প্রার্থী ও দলকে ভোট দিতে চায়। কিন্তু তারা ভোট দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই আমরা চাই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই নির্বাচনের জন্যই আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। এবং সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি যেন তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করে।
সামনের কর্মসূচির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই বিশৃঙ্খল কোনো আন্দোলনে বিশ্বাসী না। মানুষের জানমালের গ্যারান্টি দেয়ার জন্যই আমরা আন্দোলন করি, রাজনীতি করি সেহেতু যে সমস্ত কর্মসূচি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নতা ঘটায় সাধারণত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এমন কর্মসূচি দেয় না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থন করে। তবে সামনে এমন কর্মসূচিতে যাচ্ছি না বা যাবো না এখন তো তা বলতে পারছি না। আমি তো আগেই বলেছি সরকারকে প্রেসার দেয়ার জন্য যে ধরনের কর্মসূচি দেয়ার প্রয়োজন আমরা সেই ধরনের কর্মসূচি ইনশাআল্লাহ দেবো। তিনি বলেন, সরকারের সব পর্যায়ের ব্যক্তিগণ আমাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই জনগণের সঙ্গে গাদ্দারি করে প্রহসনের পাতানো নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না।
বিরোধীদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন যাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তো আন্দোলনের মধ্যে আছি। বিরোধী দলের যে কর্মসূচি আছে তাতে আমরা সমর্থন দিয়ে আসছি। তবে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ইসলামী আন্দোলন কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধ্যানুযায়ী আন্দোলন করবো। প্রতিবাদ করবো। অবশ্যই সাধ্যানুযায়ী প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। যতদূর আমাদের সাধ্য আছে, শক্তি আছে- সেই শক্তি অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো।
অনেকে বলছে সরকার এভাবে একতরফা নির্বাচন করলে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার কাছেও শতভাগ তাই মনে হয়। আমেরিকাকে বা বহিঃশক্তিকে যেভাবে তাচ্ছিল্য করছে, হেয়প্রতিপন্ন করছে, একজন রাষ্ট্রদূতকে সম্মান করা, ইজ্জত দেয়া, নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব, তাকে হেনস্থা বা মারার যে হুমকি দিয়েছে এত বড় একটা কান্ট্রির রাষ্ট্রদূতকে হেনস্থা করা মানেই সেই রাষ্ট্রকে হেনস্থা করা। আপনার যদি শক্তি থাকে তাহলে আপনি এ অপমান সহ্য করবেন? করতেন? কাজেই আমি মনে করি এটা আমার দেশের জন্য ক্ষতি, জনগণের জন্য ক্ষতি, এই ভূখণ্ডের জন্য ক্ষতি। আমাদের কারণেই পরাশক্তি আমাদের বিরুদ্ধে লাগবে। যাতে সমস্ত জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অনেক গরম বক্তব্য দেন, কিন্তু কর্মসূচির ক্ষেত্রে অনেক নমনীয়। এটি কি দলীয় নীতি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন আমাদের কথা বলার শক্তি আছে বিধায় গরম কথা বলি। যখন হাত দিয়ে কাজ করার শক্তি হবে তখন তাই করবো। তিনি বলেন, মাঠে নামার পরে হাঁটু ভেঙে ঘরে বসে থাকার নাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের সাহস-শক্তি অনুযায়ী কর্মসূচি দেয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যারাই সরকার গঠন করছে তারাই সংবিধানে হস্তক্ষেপ করেছে। ১৫ বার সংবিধানকে কাটা-ছেঁড়া করা হয়েছে। যারা সংবিধানের দোহাই দেয়, যদি সংবিধান খোদা প্রদত্ত কোনো বাণী হতো সেটা তো পরিবর্তন করতে পারতো না। যেহেতু পরিবর্তন করে, পরিবর্তন হয়- সেহেতু জনগণের স্বার্থেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংকটপূর্ণ। এত সংকটময় অবস্থায় স্বাধীনতার পর আর কখনো ছিল কিনা আমি জানি না। পরাশক্তিগুলো আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করার পাঁয়তারা করছে। অর্থনৈতিক অবস্থা এত খারাপ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এমন কোনোদিন হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর এতটা কোনোদিন বাড়েনি। রিজার্ভ তো আরও কমবে। ঋণ দিয়ে যখন ঋণ পরিশোধ করবে তখন দেশ আরও সংকটের মধ্যে পড়বে।
তিনি বলেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র অফিসে তালা। তাদের সমস্ত নেতারা গ্রেপ্তার। এমনকি গ্রাম পর্যায়ের, ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি-সেক্রেটারি ঘরে থাকতে পারে না। তাদেরকে বাদ দিয়ে কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এটা প্রহসন। আমি মনে করি এই নির্বাচন কমিশন আসলে নির্বাচন কমিশন নয়; আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের এক কমিশন। একে আমরা ইন্তেকাল কমিশন বলি। সে অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছে।’