ঢাকা থেকে বরিশালে আসা এমভি পারাবত ১০ লঞ্চের স্টাফ কেবিনে স্ত্রীকে ছুরি চালিয়ে হত্যা করেছে স্বামী ও তার দুই সহযোগী। রাত ২ টার দিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলে লঞ্চের যাত্রী ও স্টাফরা নিহতের স্বামীসহ ঘাতক ৩ জনকে আটক করে। মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৪ টার দিকে লঞ্চটি ঘাটে আসলে তাদের পুলিশের হাতে সোপার্দ করা হয়। নিহতের নাম মিনা আক্তার (২৫) সে কুমিল্লা জেলার হোমনা এলাকার বাসিন্দা ও শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা হালিম পাটোয়ারির ছেলে আনিসের (২০) স্ত্রী। লঞ্চে থাকা বরগুনার জেলার আমতলী উপজেলার বাসিন্দা এনামুল তালুকদার জানান, তিনি লঞ্চের তৃতীয় তলার ওই স্টাফ কেবিনের সামনের ডেকে অবস্থান করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে কেবিনের ভেতরে ২ যুবক প্রবেশ করার কিছুক্ষন পরই নারী কন্ঠে চিৎকার শুনতে পান।
এরপর তিনি সহ লঞ্চের অন্য যাত্রী ও স্টাফরা কেবিনের দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রায় ঘন্টাখানেক সময় পরে ওই ২ যুবক বের হয়ে যেতে চাইলে তারা আটকে দেন এবং জিজ্ঞাসা করেন। এসময় সন্দেহ হলে কেবিনের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় নারীর মৃতদেহ বিছানায় পরে থাকতে দেখেন। এরপর স্বামীসহ ৩ জনকে আটকে রাখেন তারা। বরিশাল নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্য শফিকুল ইসলাম জানান, তারা আগাম খবর পেয়ে ঘাটে অবস্থান করছিলেন। লঞ্চটি ঘাটে আসলে পুলিশ ওই তিন যুবককে আটক করেন। আটককৃতরা হলেন, মৃতের স্বামী ও শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা হালিম পাটোয়ারির ছেলে আনিস, আনিসের চাচাতো ভাই ও একই এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব আলীর ছেলে কালাম ও তার বন্ধু নওগা জেলার সাঈদ হাসানের ছেলে তুষার।
তিনি বলেন, আটককৃতরা সকলেই ঢাকার সাভারে থাকেন। আনিস এ্যামব্রোয়ডারির কাজ করেন, কালাম লন্ড্রির কাজ ও তুষার জুতোর কারখানায় কাজ করেন। এদের সকলেরই বয়স ১৮-২২ বছরের মধ্যে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। এই এস.আই আরো জানান, মুঠোফোনে পরিচয়ের জের ধরে ঈদের কয়েকদিন পরে ঢাকার মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা মিনার সাথে আনিসের বিয়ে হয়। আনিস জানায়, বিয়ের পর জানতে পারে মিনা যৌনকর্মী ও তাকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছে।
বিষয়টি তার চাচাতো ভাই কালামকে জানালে হলে সে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং চুক্তি অনুযায়ী আনিসের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যায় আনিস তার স্ত্রী মিনাকে সাথে নিয়ে কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে বরিশালগামী পারাবত ১০ লঞ্চের মাষ্টার কেবিন ভাড়া নেয়। রাত ২ টার দিকে মিনা ঘুমিয়ে গেলে ও লঞ্চটি হিজলা এলাকা পার হওয়ার সময় আনিস তার চাচাতো ভাই কালাম ও তার বন্ধুকে কেবিনের ভেতরে নেয়। এসময় তারা ছুরি চালিয়ে মিনাকে হত্যা করে। আটক ঘাতক কালাম জানান, ভাইয়ের পারিবারিক ওই অশান্তির কথা জানতে পেরেই তারা এ কাজ করেছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাইয়ের বউকে হত্যা করে তার মৃতদেহ কেবিনে ফেলে তারা পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কোতোয়ালী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ রহমান বলেন তারা খবর পেয়ে লঞ্চে আসেন এবং ওই তিনজনকে যাত্রী ও স্টাফদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আটক করেন। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যে ছুড়ি দিয়ে মিনাকে হত্যা করা হয়েছে তাও উদ্ধার করা হয়েছে। আটক তিনজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মৃতদেহের সূরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় মামলা হবে।
বরিশালের খবর