বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৭:১৪ অপরাহ্ণ, ২৯ মার্চ ২০১৬
পটুয়াখালীতে চীন-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনের দ্য ফার্স্ট নর্থ-ইস্ট ইলেকট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এনইপিসি) সঙ্গে বাংলাদেশ-চীন বিদ্যুৎ কোম্পানির (বিসিপিসিএল) চুক্তি সই হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এ চুক্তি সই হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগামীকাল ৩০ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানার এ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোক্তা চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি।
পায়রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৪ সালে সিএমসি ও নর্থ ওয়েস্ট এমওইউ সই করে। এর আলোকেই সে বছরই বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি গঠন করা হয়। পটুয়াখালিতে পায়রা সমুদ্র বন্দরের পাশে নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মোট ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হবে সাড়ে ৬ টাকা। এ প্রকল্পের নতুন দিক হলো অর্থায়ন চুক্তির আগেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। যেখানে অন্য প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়ন চুক্তি আগে সম্পাদন করতে হতো।
জানা গেছে, চীনের সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী সংস্থা সাইনোশিওর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করছে। প্রকল্পে চীনের মালিকানা থাকায় সাইনোশিওরের মাধ্যমে অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের জন্য পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় মধুপুর এবং দেবপুর মৌজার মধুপাড়া, নিশানবাড়িয়া, দশরহাউলা, মরিচবুনিয়া গ্রামের ৯৮২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, আন্ধারমানিক এবং রামনাবাদ নদীর মোহনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে গ্রীষ্ম মৌসুমে ৬ মিটার এবং বর্ষায় ১৩ মিটার পানির গভীরতা থাকে। জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্রাংশ আসবে চীন থেকে। কন্ট্রোল প্যানেল সরবরাহ করবে জার্মানি। আর এ্যাশ ক্যাচার আনা হবে আমেরিকা থেকে। ঠিকাদার এনইপিসির তুরস্ক ও ভিয়েতনামে ৬০০ মেগাওয়াটের ওপরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে। আর যৌথ মালিক সিএমসি দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বড়পুকুরিয়া (২৫০ মেগাওয়াট) নির্মাণ করেছে। পটুয়াখালীতে আরো একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ৷ কয়লাচালিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্পটি যৌথভাবে রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল বাস্তবায়ন করবে।
অন্যদিকে, বাগেরাহটের রামপালে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে একই ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের জন্য ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) মধ্যে যৌথ বিনিয়োগ কোম্পানি গঠনের চুক্তি হয়। একই বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ভারত মৈত্রি বিদ্যুৎ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রটির কাজ পেয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড (ভেল)। কিন্তু নির্মাণ চুক্তি এখনো হয়নি। সুন্দরবনের কাছে বলে এ প্রকল্প নিয়ে দেশে বিদেশে বিরুপ সমালোচনা ও বিরোধীতা আছে।
উল্লেখ্য, গ্যাসের স্বল্পতায় সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে বেশি ঝুঁকছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত গৃহীত বিদ্যুৎ খাতের মহা পরিকল্পনা অনুসারে ২১ হাজার ৭৮৫ মেগাওয়াটের ২৪ টি কয়লা চালিত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ১০ হাজার ১৭০ মেগাওয়াটের নয়টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি উদ্যোগে ১০ হাজার মেগাওয়াটের ৭ বৃহৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা আছে। বেসরকারিখাতেও সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের সাতটি প্রকল্প রয়েছে।