পিরোজপুর: পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ২০ দিনে চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ অন্তত ছয়জন জনপ্রতিনিধির ওপর হামলা ঘটে। হামলা হয় সাবেক এক এমপির বাড়িতেও। হামলার শিকার সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, যাদের কয়েকজন স্থানীয় সাংসদ একেএম এ আউয়ালের অনুসারী। হামলাকারীরাও নিজ দলীয় লোক বলে অভিযোগ থেকে জানা যায়।
এসব ঘটনায় থানায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, দলের জেলাসহ তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে কোন্দল মূল কারণ বলা হয়েছে।
তবে হামলা বাড়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের পিরোজপুর জেলা সভাপতি ও সাংসদ একেএমএ আউয়ালের অভিযোগের আঙ্গুল পিরোজপুর পুলিশ সুপারের দিকে।
২৩ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে পিরোজপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও শারিকতলা-ডুমুরিতলা ইউপির সদস্য তপন কুমার সাহাকে (৪৫) হাতুড়িপেটা করে পা ভেঙে দেয় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। ওই দিন দুপুরে ডুমুরিতলা গ্রামের তার বাড়ির পাশের একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তিনি। এ সময় কয়েক যুবক এসে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেতলে গুরুতর জখম করে চলে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পিরোজপুর সদর হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে তপনের প্রতিপক্ষরা তার ওপর হামলা চালিয়েছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
এর তিন দিন আগে ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পিরোজপুর সদর উপজেলার শারিকতলা-ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরাজুর রহমান রাজু মোল্যাকে (৩৮) কোপায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। শহরের বলাকা ক্লাব রোডের একটি মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন তিনি। সন্ত্রাসীরা দা দিয়ে কুপিয়ে ও হাতুড়িপেটা করে তাকে মারাত্মক জখম করে। প্রথমে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তির পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তার বড় ভাই মাইনুল আহসান জুয়েল মোল্যা সদর উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. কাইউম হাওলাদার (৩৫) হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত কাইউম বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পরদিন তার ভাই আব্দুল হালিম বাদি হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০জনকে আসামি করে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। আসামির অনেকেই দলীয় নেতাকর্মী। অভ্যন্তরীণ কোন্দল অথবা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলা ও মামলাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল, আন্দোলন, সমাবেশসহ মানববন্ধন করছে।’
জেলা পরিষদ নির্বাচনের আগের দিন গত ২৭ ডিসেম্বর স্বরূপকাঠি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র গোলাম কবিরকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের একটি গ্র“প। জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দল-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলমের বিরোধিতা করার কারণে এ হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের পরদিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অধ্যক্ষ শাহ আলমের স্বরূপকাঠির ইন্দেরহাটের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বাসার সামনে রাখা যুবলীগ নেতা রুহুল আমীন ও বেগম ফজিলা রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. বেলায়েত হোসেনের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
এ সময় হামলাকারীরা অধ্যক্ষ শাহ আলমকে খুঁজছিল জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেছিলেন- তাকে না পেয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালায়।
এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ হামলাকারীরা মাদকসেবী (ইয়াবা) বলে দাবি করেছিল। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়।
নিজের বাড়িতে ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল এ জন্য দায়ী করেন পিরোজপুরের এসপিকে। তিনি বলেন, ‘এসপির প্রশ্রয় পেয়েই এসব হচ্ছে।’
এই অভিযোগের সপক্ষে বলতে গিয়ে সাংসদ বলেন- ‘রাজু চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হামলাকারীরা প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। এফআইআর মামলার আসামি দারোগার মোটরসাইকেল ব্যবহার করে, সেই মোটরসাইকেলসহ ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনায় পড়ে। এছাড়া রাজু চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন পর্যন্ত করতে দেয়নি পুলিশ।
তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে।’ এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে বলে প্রশ্ন তোলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আউয়াল।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে পিরোজপুর পুলিশ সুপার মো. ওয়ালিদ হোসেনের মুঠোফোনে শুক্রবার সকালে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন ধরেননি তিনি।
খবর বিজ্ঞপ্তি, পিরোজপুর