৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

পিরোজপুরে সহিংসতা কখনো দেখেননি কেউ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৭ অপরাহ্ণ, ২৪ মার্চ ২০১৬

ছেলে সোলায়মানকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা মঞ্জু বেগম। আরেক ছেলে আলাউদ্দিনককে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন তিনি। সাফা ডিগ্রি কলেজের সামনের রাস্তার পাশে অনেকটা জায়গাজুড়ে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে গুলির অসংখ্য চিহ্ন। এই দৃশ্যে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়নের অধিবাসীরা হতবাক-বাকরুদ্ধ। তাঁরা এমন সহিংসতা কখনো দেখেননি বলে জানিয়েছেন। ইউপি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার ওই ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে নানা বয়সের মানুষের আনাগোনা দেখা যায়।

Pirojpure (1)

তাঁরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানান। ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি করা হয়েছে। নিহত পাঁচজনের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারগুলো এখনো তাদের স্বজনদের লাশ পায়নি। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় পঞ্চাশোর্ধ্ব মোফাজ্জল করিম বলেন, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় উপজেলায় এমন সহিংসতা দেখেননি। মোফাজ্জলের মতো স্থানীয় আরও কয়েক ব্যক্তি একই কথা জানালেন।’ নিহত পাঁচজনের মধ্যে একজন বেলাল। তাঁর বাড়ি ইউনিয়নের বুড়িরচর গ্রামে।

 

বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্বজনেরা আহাজারি করছেন। নিহত বেলালের সাত বছরের ছেলে সিফাত কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আপনারা আমার বাবাকে আইনা (এনে) দেন।’ বেলালের স্ত্রী সীমা আক্তার উঠানে গড়াগড়ি দিয়ে আহাজারি করছিলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘স্যার, আপনাদের পায়ে পড়ি, আমার স্বামীকে আইনা দেন।’ নিহত সোলায়মানের বাড়িতে গিয়েও স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য দেখা যায়। তাঁর স্বজনেরা বলেন, খুলনা থেকে অনার্স পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন সোলায়মান। বাড়িতে এসে লাশ হয়েছেন তিনি। সোলায়মানের মা রহিমা আক্তার ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘ওরে সোলেমান, তোরে ছাড়া কী কইরা বাঁচমু?’ নিহত সোহেল, শাহাদাত ও কামরুলের বাড়িতেও আহাজারি চলছে। তাঁদের স্বজনেরা বলছেন, তাঁরা এই ঘটনার বিচার চান। জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, নিহত ব্যক্তিদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

Pirojpure (2)

এ ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিয়ে সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করতে চাইলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাধা দেন। এর পরও তিনি ফল ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। খবর পেয়ে র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা কেন্দ্রে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে তারা গুলি ছোড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দীপাঞ্চল পাল বলেন, তিনি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফলাফল ঘোষণা করতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ফলাফল ঘোষণায় বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি ছোড়া হয়।’

35 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন