পিরোজপুর/ আর্থিক চুক্তিতে জাতীয়পার্টি নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা!
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: পূর্ব বিরোধের জেরে দুই বছর আগে আড়াই লাখ টাকায় জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে চুক্তির টাকা পরিশোধও করা হয়। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিকুলের ওপর হামলা চালানো হয়। শফিকুলের পা বিচ্ছিন্ন হলেও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
হামলার মূল আসামী ইয়াসিনকে ঢাকা লালবাগ থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর পিরোজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে মঠবাড়িয়া থানা চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের চাঞ্চল্যকর ঘটনার তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃত মূল হামলাকারী ইয়াসিন উপজেলার তুষাখালী গ্রামের মো. হাফেজ খানের ছেলে। আহত শফিকুল ইসলাম একই গ্রামের আইয়ূব আলী শিকদারের ছেলে ও তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক।
এ সময় পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃত মূল আসামী ইয়াসিন এর তথ্যমতে মঠবাড়িয়া পৌর শহরের বহেরাতলা এলাকার জনৈক জলীল জমাদ্দারের বাড়ির পাশের খাল থেকে হামলায় ব্যবহৃত দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
ইয়াসিনের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, শফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াসিনসহ তার ৫ সহযোগীদের নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা ঝাউতলার একটি বাসায় একত্রিত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বাজার থেকে ৯শ টাকায় ৩টি ধারাল ‘দা’ ক্রয় করে। ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হত্যার পরিকল্পনাকারী তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানি নাসির হোসেন জাতীয় পার্টি নেতা শফিকুল ইসলামের অবস্থান ও তথ্য ওত পেতে থাকা ইয়াসিনকে মোবাইলের মাধ্যমে অবহিত করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুসা শরীফের সঙ্গে চলমান একটি মামলায় শফিকুল আদালতে হাজিরা দিতে সকালে মোটরসাইকেলযোগে তুষখালী থেকে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝের পুলের সন্নিকটে ফরাজি বাড়ির সামনে কালভার্টের উপরে আসা মাত্রই একটি মহেন্দ্র গাড়ি শফিকুলের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। শফিকুল মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিলে হামলাকারীরা মাহেন্দ্র থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পা বিচ্ছিন্ন করে।
এ সময় এলোধাবাড়ি কোপানোর কারণে শফিকুলের পেটের ভুড়ি বেড়িয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। হামলাকারী ইয়াসিন ও তার সহযোগীরা ৪ কিলোমিটার দূরে বহেরাতলা এলাকার খালে ধারালো অস্ত্রগুলো ফেলে দিয়ে মাহেন্দ্রযোগে পালিয়ে যায়। মাহেন্দ্র চালককে ৫ হাজার ও অপর ৩ সহযোগীকে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করে ইয়াসিন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, স্থানীয়রা গুরুতর আহত শফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই নাসির হাওলাদারকে আটক করে। পরে নাসিরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আহত শফিকুলের মা মমতাজ বেগম মামলা করলে নাসির হাওলাদারকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়।
১ অক্টোবর হামলায় ব্যবহৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি পার্শ্ববর্তী ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে চালক পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। মূল পরিকল্পনাকারী চেয়ারম্যানের ভাই নাসির হাওলাদার ও মূল হামলাকারী ইয়াসিনের মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পিরোজপুর পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে আর কিছু বলা সম্ভব নয়। ঘটনায় জড়িত ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মঠবাড়িয়া থানার ওসি মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল, ওসি ডিবি (পিরোজপুর দক্ষিণ বিভাগ) আসলাম উদ্দিন, মঠবাড়িয়া থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ, ডিবি পরিদর্শক মাহফুজ এবং পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর হালিম প্রমুখ।
শিরোনামপিরোজপুর