বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৮:০৩ অপরাহ্ণ, ২৬ মার্চ ২০১৭
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে থাকা জঙ্গিরা বেশ প্রশিক্ষিত বলে জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, ভেতরে থাকা জঙ্গিরা বেশ কৌশলী। তারা জানে কীভাবে দুর্গম করতে হয়। অভিযানে ভালো ঝুঁকি রয়েছে। পুরো আতিয়া মহল এখন ঝুঁকিপূর্ণ। রোববার পৌনে ৬টায় পাঠানপাড়ায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন ফখরুল আহসান। ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, ‘তাদের কাছে স্মল আর্মস আছে, এক্সপ্লোসিভ আছে, আইইডি আছে, তারা ওয়েল ইকুইপড।’ ‘আমরা যে গ্রেনেড ছুড়েছি, তারা সেগুলো ধরে উল্টা আবার আমাদের দিকে নিক্ষেপ করেছে। টিয়ার শেল ছুড়লে যে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা এসব টেকনিক জানে।’ তিনি বলেন, ‘দুজন নিহত হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত দেখতে পেয়েছি।
একজনের দেহে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো ছিল।’ ‘দুজনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করে। তারা পড়ে যাওয়ার পর একজন সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়।’ ভেতরে আর কতজন আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক বা একাধিক ভেতরে আছে। তারা খুব সতর্ক, সুইসাইড ভেস্ট পরে আছে।’ নিহত দুজন পুরুষ বলে জানানো হয়েছে। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে নারী রয়েছে কি না- প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, ‘মহিলা আছে কি না, আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।’ কখন নাগাদ অভিযান শেষ হতে পারে- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কমান্ডোরা চেষ্টা করছে। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে অপারেশন কখন শেষ হবে। অপারেশন পরিচালনা বেশ ডিফিকাল্ট হচ্ছে।’ ‘আজ সকাল থেকে বিভিন্ন টেকটিক অ্যাপ্লাই করছিলাম, রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে হোল তৈরি করে… সুবিধা হচ্ছিল না। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি। তাতে জঙ্গিরা কিছুটা অসুবিধায় পড়ে। তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়’— বলেন তিনি।
অভিযানে সেনাবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি বলেও জানান ব্রিগেডিয়ার ফখরুল। আটকেপড়াদের শনিবার উদ্ধার করে আসার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বাড়ির সামনে এবং বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বসিয়েছে বলে সামনে দিয়ে ঢোকা নিরাপদ ছিল না। কমান্ডোরা কৌশলে মই ব্যবহার করে পাশের ভবন থেকে গিয়ে গ্রিল কেটে লোকজনকে বের করে আনে। ‘ঝড় বৃষ্টি ছিল, জঙ্গিরা এ অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিল না’ বলেন ব্রিগেডিয়ার ফখরুল। পাশের একটি ভবন থেকে রোববার এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল অন্যদের উদ্ধারের সময় তাকে আনা যায়নি। ইনি আতিয়া মহলের নন।’
শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ শুরু করে সেনাবাহিনী। ওইদিন দুপুর ২টায় শুরু হয় মূল অভিযান। এর আগে শনিবার সকালে ‘আতিয়া মহলে’ সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা শনিবার সকালেই ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা। শুক্রবার পুলিশ-র্যাব, সোয়াট আস্তানা ঘিরে রেখেছিল। রোববার অভিযানের তিনদিন চলছে। শুক্রবার সকালে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির ভেতর থেকে ২ রাউন্ড গুলি করে জঙ্গিরা। জবাবে পুলিশও পাল্টা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় সেখান থেকে। এছাড়া বাড়ির ভেতর থেকে কয়েকজনকে একসঙ্গে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে শোনা যায়।
বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িস্থ জহির তাহির মেমোরিয়াল স্কুলসংলগ্ন বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। রাতে বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এদিকে জঙ্গি দমন অভিযান চলাকালেই শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটে চেকপোস্ট এলাকায় দুই দফা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত। এর আগে শুক্রবার রাতে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বোমার বিস্ফোরণে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক এক যুবক নিহত হন। ঢাকা ও সিলেটের এ বিস্ফোরণের ঘটনায় আইএসের পরিচয়ে দায় স্বীকার করার কথা জানিয়েছে সাইট ইন্টেলেজিন্স গ্রুপ।