বরগুনার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ধান ক্ষেতে ২০টি ইটভাটা গড়ে উঠছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর আদেশ রয়েছে কোন ফসলের ক্ষেতের ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর সেই আদেশ বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পরেছে ফসলি জমি। এমনকি অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি জমি রক্ষা ও পরিবেশ বাচাঁনোর জন্য কৃষি জমিতে ইটভাটাসহ শিল্প কারখানা না করার জন্য বারবার আহবান জানানোর পরেও অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না। বরগুনার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ২০টি ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ও পাজায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।
স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি ইটভাটার স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানী হিসাবে অনেক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের জন্য গ্রাম থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে স্তুপ করে রাখছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছে পরিবেশবাদীরা।
কৃষি জমিতে ইটভাটা করায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। এদিকে কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের জন্য কৃষি অফিসের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হলেও অধিকাংশ ইটভাটার ছাড়পত্র নেই।
আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন ২০টি ঝিকঝ্যাঁক ও ড্রাম চিমনি এবং পাজায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। বরগুনা জেলা প্রশাসক দপ্তর সুত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় আটটি বৈধ ইটভাটা রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে- আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সেকান্দারখালী নামক স্থানে এসইউএবি, এমএসবি, কেএবি, জিমিসহ ইটভাটা ধান ক্ষেতের মধ্যে ঝিকঝ্যাঁকের চুল্লী নির্মাণ করে মাটি কেটে ইতিমধ্যে ইট তৈরী ও পোড়ানোর কাজ শুরু করেছে।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের বাদুরা নামক স্থানের ধান ক্ষেতের পাশে ডিবিএম ঝিকঝ্যাঁক ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। চাওড়া তালুকদার বাজারের রাস্তার পাশে ইট পোড়ানোর জন্য কাঠ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। হলদিয়া ইউনিয়নের সারা ব্রিকসে ইট পোড়ানোর কাজ দ্রুত চলছে।
কল্যাণপুর গ্রামের আবদুল বারেক ও কড়াইবুনিয়া গ্রামের রাকিব জানিয়েছেন- কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তারা আরও বলেন ইট ভাটার প্রভাবে অনেক গাছপালা মরে যাচ্ছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম বদরুল আলম বরিশালটাইমসকে জানান- আমার কাছে পরিবেশ অধিদপ্তর কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তার কোন তালিকা চায়নি। তিনি আরও জানান কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কোন ইটভাটার আমি ছাড়পত্র দেয়নি। আমার ছাড়পত্র ছাড়াই তৈরি হচ্ছে ইটভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কর্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বরিশালটাইমসকে বলেন- আমতলীতে অনেক ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ ইটভাটা নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিরোনামখবর বিজ্ঞপ্তি, বরগুনা