বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৯:০৬ অপরাহ্ণ, ২০ মার্চ ২০১৬
বরিশাল: প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও দীর্ঘদিন পর্যন্ত তালিকাভূক্ত হতে না পারা অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে তালিকাভূক্তির নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর স্ক্যান করে গেজেটভুক্ত হওয়ার আগেই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার কর্তৃক বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সনদ ও সাময়িক সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার।
উপজেলার পূর্ব বেজহার গ্রামের মৃত করম আলী সরদারের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা (গেজেটভূক্ত নন) এস.এম শাহজাহান অভিযোগ করেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি দীর্ঘদিনে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গেজেটভূক্ত হতে পারেননি। সম্প্রতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেন তাকে গেজেটভূক্ত করে শুরু থেকে অদ্যবর্ধি সকল ভাতা পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন সময় সর্বমোট ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের একটি সনদ ও সাময়িক সনদপত্রের ফটোকপি দেয়া হয়।
শাহজাহান আরও জানান, খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন তাকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত সনদ ও সাময়িক সনদপত্র কম্পিউটারে বানানো। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর স্ক্যান করে তাকে সনদপত্রের ফটোকপি দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি (শাহজাহান) আনোয়ার হোসেনের কাছে উভয় কপির মূলসনদপত্র চাওয়ায় সে নানা তালবাহানা শুরু করে। অতিসম্প্রতি তার পুরো টাকা ফেরত চাওয়ায় আনোয়ার তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি প্রদর্শন করেন।
উপজেলার চর সরিকল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা (তালিকাভূক্ত নন) মোঃ সুলতান সিকদার, আব্দুর রহিম সরদার, সালাউদ্দিন কবিরাজ, হোসনাবাদ বারঘর গ্রামের রতন মোল্লা অভিযোগ করেন, তাদের সকলকে তালিকাভূক্ত করার জন্য গত তিনবছর পূর্বে আনোয়ার হোসেন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করেন। সম্প্রতি সমূদয় টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য একাধিকবার তার (আনোয়ার) কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল মেলেনি। অতিসম্প্রতি তালিকাভূক্ত করার জন্য তাদের প্রত্যেকের কাছে আরও ১ লাখ টাকা করে দাবি করেন আনোয়ার হোসেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, এখনও উপজেলার অসংখ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভূক্ত হতে পারেননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গেজেটভূক্ত হওয়ার তিন বছর পর মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদ পেয়ে থাকেন। সেখানে আনোয়ার হোসেন কিভাবে গেজেটভূক্ত হওয়ার আগেই সাময়িক সনদ দিয়েছেন তা আমার বোধগম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, তালিকাভূক্ত হতে পারেননি এমন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রায় প্রতিদিনই আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কমান্ডে একাধিক অভিযোগ আসছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য তাকে (আনোয়ার হোসেন) নির্দেশ দেয়ায় সে পুরো কমান্ডের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এখন কমান্ডে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি (বুলেট ছিন্টু) উল্লেখ করেন। অভিযোগের ব্যাপারে আনোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।