৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

প্রশাসনের কঠোরতায় কমেছে লঞ্চে যাত্রী বিড়ম্বনা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২৩ অপরাহ্ণ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঈদুল আজহায় লঞ্চের কেবিনের টিকিট নিয়ে বিড়ম্বনা কমেছে এবার। বৃহৎ দুটি লঞ্চ সংযোজন হওয়ার পাশাপাশি দিবা সার্ভিস গ্রীনলাইন এবং বিমান চলাচল সচল হওয়াতে যাত্রীরা অনেকটা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন।

যাত্রী সুবিধার কথা বিবেচনায় এনে বিআইডব্লিউটিসি ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে আগাম বুকিং দেওয়ার জন্য ছেড়েছে। দুর্ঘটনারোধে নির্ধারিত চালক ও আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

নদীবন্দর কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ঈদুল আজহায় বরিশাল-ঢাকা রুটে নিয়মিত ১৪টি লঞ্চের সঙ্গে আরও ৩টি লঞ্চ যুক্ত হয়ে ১৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীর সংখ্যার ওপর বিবেচনা করে এসব লঞ্চ স্পেশাল বলতে ডাবল ট্রিপ দেবে। কর্মস্থল থেকে ঘরে ফিরতে ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ঈদের আগের দিন পর্যন্ত তা চলবে। আর কর্মস্থলে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ সার্ভিসের সময় নির্ধারিত করা হয়েছে। তবে যাত্রীর চাপ থাকলে বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে তা ২৪ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

এই দফতরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. রিয়াদ হোসেন জানান, গত ঈদুল ফিতরে সুন্দরবন-১০ ও পারাবত-১২ নামক বৃহৎ দুটি লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা নৌপথে নতুন সংযোজিত হয়। এই লঞ্চ দুটিতে ৫০০ কেবিন রয়েছে। সব মিলিয়ে ঈদ স্পেশালে ১৭টি লঞ্চে কেবিন ও সোফা মিলিয়ে এর সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।

সুরভী নেভিগেশনের টিকিট কাউন্টার ম্যানেজার মো. রাকিব জানান, এবার তাদের ৩টি, সুন্দরন কোস্পানির ৩টি, পারাবতের ৪টি, কীর্তনখোলা নেভিগেশনের ২টি, টিপু কোম্পানির ২টি আর কালাম খান কোস্পানির ১টি মিলিয়ে নিয়মিত চলাচল করা ১৫টি লঞ্চ স্পেশাল হিসেবে যাত্রী সেবায় থাকছে।

তাদের ৩টি লঞ্চে ৩২০টি কেবিন আর ১৩৬টি সোফা রয়েছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আগাম স্লিপ নিয়ে নিয়মিত যাত্রীদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকিট দিচ্ছেন। যাত্রী চাপ কম থাকায় টিকিট নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই যাত্রীদের।

কীর্তনখোলা নেভিগেশনের কাউন্টার পরিচালক মো. মহিবুল্লাহ জানান, ২৩ আগস্ট থেকে ঢাকা থেকে আসা এবং ঈদ পরবর্তীতে বরিশাল থেকে ফেরার টিকিট একই সাথে দিচ্ছেন। আগে আসলে আগে পাবেন এমন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকিট দিচ্ছেন যাত্রীদের। তবে ঢাকা থেকে আসা ৮ সেপ্টেম্বর আর বরিশাল থেকে ফেরার জন্য ১৬ সেপ্টেম্বরের ব্যতীত অন্য দিনের টিকিট এখনো কাউন্টারেই মিলছে।

সুন্দরন নেভিগেশনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন জানান, এবারে ডেকের ভাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই ২৫০ টাকায়, সিঙ্গেল কেবিন ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১১০০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা আর ভিআইপি কেবিনে ১ হাজার টাকা বেড়ে ৬ হাজার আর টুইন ওয়ানের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়।

গত বছরের তুলনায় কেবিনের টিকিটের চাহিদা ২০ ভাগ কমেছে বলে জানান এই কাউন্টার ম্যানেজার।

লঞ্চের কেবিনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে তারা বেশি নিচ্ছেন না। ডেকের ভাড়ার ৪ গুণ নেওয়ার নিয়ম হলো কেবিনের জন্য। এর সাথে ভ্যাট যুক্ত হলে ভাড়া আরও বাড়লেও তা যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া কমিয়ে রাখলেও ঈদের সময় যাত্রী নামিয়ে লঞ্চ খালি চালিয়ে আসতে হয় বলে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছেন তারা।

সুরভী লঞ্চের টিকিট কাউন্টারে কথা হয় নগরীর আমানতগঞ্জের বাসিন্দা হাজী শহীদুল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে তার মেয়ে আসবেন। কোরবানির তারিখ পিছয়ে যাওয়াতে ১৩ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট বদলাতে এসে অনায়াসে পেয়েছেন। এর আগে সহজে এমনটা পাওয়া যেত না।’

সুন্দরবন নেভিগেশনের কাউন্টারে টিকিট পেয়ে খোশ মেজাজে দেখা গেছে সাগরদী এলাকার বাসিন্দা মিঠুকে। কোন সিন্ডিকেট নেই, চাপ নেই স্লিপ দেওয়া ছিল কোন তদবির ছাড়াই টিকিট পেয়েছেন।

বিগত বছরগুলোয় এমনটা সহজেই টিকিট পাওয়া যায়নি বলে জানান মিঠু।

যাত্রী সুবিধার কথা বিবেচনায় এনেই বিআইডব্লিউটিসি অনলাইনে ৫০ ভাগ টিকিট আগাম ছেড়েছেন। বাকি ৫০ ভাগ টিকিট ঢাকা প্রধান কার্যালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সংস্থার সহ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ।

তিনি জানান, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এবারে পিএস অট্রিচ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন, এমভি মধুমতি এবং এমভি বাঙ্গালী নামক ৫টি জাহাজ বরিশাল-ঢাকা প্রয়োজন অনুযায়ী মোড়লগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রা করবে। ৫টি স্টিমারে কেবিন সংখ্যা রয়েছে ১৬২।

বিআইডব্লিউটিসি’র স্টিমারের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি। বরিশাল ঢাকা রুটে ডেকের ভাড়া আগের মতো ১৭০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন সাড়ে ১১০০, ডবল ২৩০০, ভিআইপি কেবিন ৩ হাজার ৮৪৬ টাকা করে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধায় চাঁদপুরে তাদের টাগবোট রাখা আছে।

সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, একটি সংস্থার দেওয়া হিসেব হল বরিশাল অঞ্চলে নদীপথে ১০ থেকে ১২ লাখ যাত্রী ঘরে ফিরবে। এই হিসেবে আড়াই থেকে ৩ লাখ যাত্রী বরিশাল নদী বন্দরে নামবেন।

তবে এই সংখ্যা এবার ২ লাখ হবে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তা মো. মেস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কম আসেন। তারপরও আগের মতো আনসার, নৌপুলিশ, নগর পুলিশ, রোভার স্কাউট এরা থাকছেন যাত্রী সেবায়। আগে আসার মানসিকতা থেকে যাতে লঞ্চ দুর্ঘটনার সমামুখীন না হয় এজন্য মালিকদের আগাম সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার সময় নিশ্চিত করতে হবে নির্ধারিত মাস্টার ও সুকানী লঞ্চ চালাচ্ছেন কিনা।’

তিনি মনে করছেন এবারের ঈদে বরিশালের লঞ্চ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাওয়া আসা করতে পারবেন।

24 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন