বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক। অত:পর ঘর বাঁধার স্বপ্ন। তবে তাদের মধ্যে বাধা ছিল আকাশ সমান। দুই দেশ, ভিন্ন সংস্কৃতি। কিন্তু থেমে নেই ভালবাসা। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে প্রেমের। তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ইতিমধ্যে ঘরকন্নাও শুরু করেছেন।’’
এই দম্পতি হলেন- বাংলাদেশের কাইয়ুম ও অস্ট্রেলিয়ার ফ্যালেসিয়া। কাইয়ুম বরিশাল নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা আলতাফ স্কুল রোডের মৃত আহম্মেদ আলী হাওলাদার ও ফিরোজা বেগম দম্পত্তির ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে পঞ্চম কাইয়ুম। ২০০৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেন কাইয়ুম।’’
সেখানকার ইউনিভার্সিটি অব বালারাত থেকে প্রফেশনাল একাউন্টিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে গত ৬ বছর ধরে মেলবোর্নের হ্যালো ওয়ার্ল্ড লিমিটেড কোম্পানিতে একাউন্টস্ টিম লিডার পদে চাকরি করছেন।’’
অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটির রুবেন ড্যান ও প্রয়াত ট্যান ইন ডিয়ক দম্পত্তির ৪ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ফ্যালেসিয়া। তিনি অকল্যান্ডের গ্লেন ফিল্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাস করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শেষে গত ৩ বছর আগে চাকরি নেন মেলবোর্নের হ্যালো ওয়ার্ল্ড লিমিটেড কোম্পানির প্রকিউরমেন্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে।
একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে কাইয়ুম ও ফ্যালেসিয়ার মধ্যে পরিচয় এবং জানাশোনা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মেলবোর্নে অপারপর বাংলাদেশি বিশেষ করে কাইয়ুমের ঘনিষ্ট বরিশালের অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্যালেসিয়ার। তাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে এবং ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে এই দেশকে ভালোবেসে ফেলেন ফ্যালেসিয়া।’’
এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক গড়ায় প্রনয়ে। শেষ পর্যন্ত দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে পাকাপাকি হয়। বিয়ের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতে গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন কাইয়ুমের পরিবারের একাধিক সদস্য।’’
শ্বশুরবাড়ির আয়োজিত বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় অংশ নিতে গত ৪ মার্চ প্রথমবারের মতো স্বামীসহ বাংলাদেশে আসেন ফ্যালেসিয়া। গত কয়েকদিনে শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ বরিশালের মানুষের ভালোবাসা তাকে আপন করে নিয়েছে। ফ্যালেসিয়া বলেন, বাংলাদেশ খুবই নিরাপদ দেশ। এখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের কোন অস্বস্তি নেই। বরিশালে শ্বশুড়বাড়ি হওয়ায় খুশি তিনি। এই দেশের মানুষের ভালোবাসার টানে তিনি বারবার বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।
কাইয়ুমের বড় বোন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আয়শা তৌহিদ লুনা বলেন, ফ্যালেসিয়া ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতে শিখেছে। পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে গত কয়েক দিনে তার চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সে শ্বশুর পরিবারের সকলকে আপন করে নিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ফ্যালেসিয়ার বাবা ও মা দুইজনই ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক ছিলেন। পরবর্তীতে তারা স্ব-পরিবারে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটিতে বসবাস শুরু করেন এবং তারা নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান। পড়াশোনা এবং চাকরির সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো ফ্যালেসিয়া পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পড়াশোনার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কাইয়ুমও অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হয়েছেন কয়েক বছর আগে। আগামী ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন নবদম্পত্তি।’’
শিরোনামটাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর