বার্তা পরিবেক, অনলাইন :: করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ফরিদপুরের দুগ্ধ খামারের উৎপাদিত দুধ বিক্রয় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জেলার নয় উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার খামারি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, ফরিদপুর জেলায় প্রতিদিন ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এ জেলার চরাঞ্চল, বিল এলাকায় মাষকলাইসহ বিভিন্ন জাতের ডালের চাষ হয়। খামারি ও কৃষকরা এ সময়কে ‘কলাই’ মৌসুম বলে থাকেন। এ মৌসুমে প্রচুর ঘাস পাওয়া যায়। এসব ঘাস গোখাদ্য হিসেবে বেশ উপকারী। এ ঘাস খেলে গাভির দুধ উৎপাদন বেড়ে যায়। তাই ‘কলাই’ মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় দুধ উৎপাদন হয় প্রায় ২০ হাজার লিটার। ভরা মৌসুমের খামারিদের মাথায় হাত।
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরুল্লাহ মো. আহসান জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দুধ বিক্রয় কমতে থাকায় আমরা জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে প্রচার করতে থাকি। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেলে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এসব পরামর্শ আমরা দিতে থাকি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এখন দুধ বিক্রি বেশ কম হচ্ছে। মিষ্টির দোকানগুলোও বন্ধ। তাই আমরা খামারিদের দুধ নষ্ট না করে বিকল্প প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পরার্মশ দিচ্ছি।
ফরিদপুরের বেশ কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গুজব ছড়ায়। এ গুজবের কারণে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রি বেশ কমে যায়। দুধের দাম লিটারপ্রতি ৫০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে আসে। অনেক এলাকায় প্রতি লিটার দুধ ১২ টাকায় নেমে আসে।
এরপরই প্রশাসনিকভাবে এ গুজব ঠেকাতে কার্যক্রম শুরু করে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। এ কার্যক্রমের ফলে দুধ, মাছ, মাংস, ডিম বিক্রি কিছুটা বাড়লেও আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। প্রচুর পরিমাণে দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। তাই জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে খামারিদের ক্রিম তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এক দিনে ৫০০ লিটার দুধ থেকে ক্রিম তৈরি করা হয়েছে।
পদ্মা নদী বেষ্টিত জেলার সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির জানান, আমার ইউনিয়নে মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস গবাদি পশু পালন। করোনার কারণে চরাঞ্চলের খামারিরা সমস্যায় পড়েছে।
একই কথা জানান পদ্মা নদী বেষ্টিত নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান। তিনি জানান, তার ইউনিয়নে এক হাজারের বেশি খামারি রয়েছে। এদের অধিকাংশ খামারি তাদের উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন পানির দামেও বিক্রয় করতে পারছে না দুধ।
করোনাভাইরাসের কারণে ফরিদপুরের তরল দুধ বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অল্প কিছু বিক্রি হলেও দাম কমে অর্ধেকে নেমে আসে। লোকসানের বোঝা বাড়তে থাকে। উপায় না পেয়ে এখন বিকল্প পথে যাচ্ছেন খামারিরা। দুধ থেকে ক্রিম তৈরি করছেন তারা। খামারিদের এ কাজে সহযোগিতা করছে ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা জানান, প্রতি ঘণ্টায় ১০০ লিটার দুধ থেকে ক্রিম তৈরি করা হচ্ছে। এ পরিমাণ দুধ থেকে ৩০ লিটারের মতো ক্রিম হয়। তবে মেশিন পুরোনো হওয়ায় দীর্ঘ সময় চালু রাখা যাচ্ছে না। এজন্য আরও কয়েকটি মেশিন কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলার টেপাখোলা, ডিক্রিরচর, চরমাধবদিয়া, খলিলপুর এলাকার খামারিরা জানান, ১ কেজি ক্রিমের দাম ২৫০ টাকা। ক্রিম থেকে ঘি করা হলে দাম এক হাজার টাকার বেশি হয়। ঘি ফ্রিজে না রেখেও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যায়।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, দুধ যেহেতু কাঁচামাল। এটা কীভাবে বিকল্প প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করা যায় সে বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, আমাদের ছোট-বড় কোনো খামারি যাতে আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
দেশের খবর