বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ অপরাহ্ণ, ২০ মে ২০১৬
বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ও পূর্ণিমার প্রভাবে কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর এবং সকল নদ-নদী ফুসে উঠেছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপকূলজুড়ে দমকা হাওয়া এবং মাঝারি ও ভাড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় সকল মাছ ধরার ট্রলার আলীপুর-মহিপুরের শিববাড়িয়া নদে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া পৌরশহরের বেড়িবাঁধের বাইরের সব স্থাপনা ও নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি দুই থেকে তিন ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকেই জোয়ারের পানির জন্য ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধের ওপর উঠে এসেছে। তবে আজ শুক্রবার রাতের জোয়ারে আরো বেশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় ভূগছেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এ ছাড়া মৎস্যবন্দর আলীপর, মহিপুরের বেড়িবাঁধের সব মাছের আড়ত এবং বরফ কলগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার চরআণ্ডা, চরকাশেম, চরমোন্তাজ, চরভেস্টিন, মৌডুবি, চালিতাবুনিয়া, পশরবুনিয়া চরের বেড়িবাঁধের বাইরের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার দুই থেকে তিন ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চরআণ্ডা গ্রামের মো. মহিউদ্দিন। রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। সেখানে রাঙ্গাবালীর সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুর রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সেবাদান ও শুকনো খাবার সরবরাহের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী জানায়, বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সে অনুযায়ী উপজেলার সকল সাইক্লোন শেল্টার আপদকালীন সময় খোলার জন্য শিক্ষক ও তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিতদের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, আনসারকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাদানের জন্য টিম প্রস্তুত ও শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগ বিষয়ে সার্বিক তথ্য সেখান থেকে সবাইকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফশিউর রহমান জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও শত শত পর্যটক কুয়াকাটায় এসেছেন। তাদের মাইকিং করে বলা হচ্ছে উত্তাল সমুদ্রে সাবধানতা অবলম্বন করে গোসল করার জন্য। পূর্ণিমা এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাতে পর্যটকদের সৈকতে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাতে গোসল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিন্মচাপ সৃষ্টি হয়। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের ৫৪ কিলোমিটার কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মাঝারি ও ভাড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার প্রভাবে সমুদ্র ও নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুয়াকাটার ও মৎস্যবন্দর আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। কলাপাড়া ও আশপাশের এলাকার প্রায় তিন শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আলীপুর-মহিপুরের শিববাড়িয়া নদে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।”