এবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীতায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আলোচনায় থাকা সম্ভব্য প্রার্থীদের বাইরে থেকে কেউ মনোনয়ন পেলেও পেতে পারে।
রাজধানী থেকে এমন পূর্ভবাসের সাথে বরিশালের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্যের সাথে একমত প্রষণ করে বলছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সরোয়ারই শেষমেশ দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন অনেকটাই এগিয়ে গেছেন কেন্দ্রীয় বিবেচনায়। এই দুই নেতার হাবভাবও তেমনটি ইঙ্গিত বহন করছে। উভয়ের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে এমন কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের এ দাবি।
বিশেষ করে- খান মামুন অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। কৌশলগত কারণে দলীয় কর্মকান্ডে নিরব থেকে নতুন মডেলের দামি গাড়িতে চেপে নগরীর বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ইদানিং তার বেশ উপস্থিত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তিনি কাউকে আঁচ করতে দিচ্ছেন না আগামী সিটি নির্বাচনে তার আকাঙ্খা কী।
নিরবে নিভৃতে ঢাকা বরিশাল যাতায়াতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের দরজায় করা নাড়ছে এবং বেশ ঘনিষ্ট বৈঠকে মিলিত হচ্ছে তার মেয়র প্রার্থীতার বিষয়টি নিশ্চিত করনে। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বেশ আলোচনায় থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তার নামটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে।
সেই সাথে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামী রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড। এই সূত্রে বর্তমান মহানগর আ’লীগের নিভেচারি নেতা খান মামুনকে কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা পরোক্ষভাবে তার সমর্থনের বিষয়টি এই নেতার কানে পৌছে দেয় বলে শোনা গেছে।
বরিশাল অঞ্চলের দুই জন প্রভাবশালী মন্ত্রী এক্ষেত্রে মধ্যস্ততার ভুমিকা রাখেন। অবশ্য নির্বাচনের আগে রাজপথে ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে না থাকালেও কিভাবে তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই প্রশ্নের উত্তর বেশ রহস্যঘেরা।
সূত্রের ভাষ্যমতে- বর্তমান বরিশালে আ’লীগের জনপ্রিয় ও একচ্ছত্র নেতা হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘ দিন ধরে মাঠে রয়েছেন। অপর নেতা কর্নেল (অবসর) জাহিদ ফারুক শামিমও দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। এ অবস্থায় বেশি শক্তিশালি হিসেবে বাহ্যিক ভাবে সাদিক আব্দুল্লাহর অবস্থান থেকে খান মামুন প্রার্থীতার প্রস্তুতিতে মাঠে নামলে সাংঘষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির সমূহ আশংকা রয়েছে।
তা এড়াতেই খান মামুনকে কৌশলী পথে চলতে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে এই নেতা গাড়ি কেনার উদ্দেশে ঢাকায় গিয়ে একঢিলে দুই পাখি মেরে আসেন বলে সূত্র জানায়। দামি মডেলের আর একটি গাড়ি ক্রয়ের পাশাপাশি তার প্রার্থীতার বিষয়টি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করে আসেন।
এবং বিএনপির ঘাটি হিসেবে বরিশাল সিটি মেয়রের পদটি লাভে তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে সাবেক মেয়র-সাংসদ ও কেন্দ্রিয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ারের সাথে পাল্লা দিয়ে কিভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার করা যায় তার একটি কৌশলও খান মামুনকে বাতলে দেয়া হয়েছে।
আভাস পাওয়া গেছে- এখন থেকে সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি কৌশলে রাজপথে নামতে পারেন। এ কারণেই তাকে ফুরফুরে মেজাজে নগরীতে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপি ঘরনার ঢাকার একটি সমর্থনযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শেষমেশ মজিবর রহমান সরোয়ারকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। বিএনপি থেকে বর্তমানে মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন প্রার্থীতার দাবিতে স্বোচ্ছার রয়েছে।
দলীয় ভাবে একে অপরের সাথে এদের সম্পর্ক থাকলেও প্রার্থীতার বিষয় নিয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। কৌশলী মজিবর রহমান সরোয়ার এই বিষয়ে স্থানীয় ভাবে নির্শ্চুপ থাকলেও ঢাকায় বেশ তৎপর যেভাবে হোক দলীয় মনোনয়ন কিভাবে নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু তা নিরবে।
সূত্র জানায়- খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানকে এখন দলীয় যেকোন সিদ্ধান্তে প্রাধান্য দেয়ায় রাজনৈতিক চতুর সরোয়ার সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছেন। প্রকাশ রয়েছে যে, তারেক রহমানের সাথে সরোয়ারের সেই পূর্ব বিরোধ এখন শীতল হয়েছে।
গড়ে উঠেছে উভয়ের মধ্যে সখ্যতা। ধারনা করা হচ্ছে বরিশাল নিয়ন্ত্রণ এবং সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চারে সরোয়ারের বিকল্প নেতা না থাকায় দলীয় মনোনয়ন দিয়ে তাকে বেশি মাত্রায় বরিশালে অবস্থান নেয়ার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। এ কারণেই দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক নেতা দুই পদে না থাকার কথা থাকলেও সরোয়ারের ক্ষেত্রে তা ছাড় দেয়া হয়েছে।
ফলে বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সরোয়ার তার প্রার্থীতার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পর নির্বাচনী মানুষিক প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে গত রাতে স্বীকার করেছেন যে দল তথা নেত্রী খালেদাজিয়া চাইলেই তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত। এই কথার মধ্যে তার কৌশল হচ্ছে তিনি নয়, নেত্রী চাইলে নির্বাচন করতে তার কোন আপত্তি নেই।
অবশ্য অপর একটি মিডিয়ার কাছে সাম্প্রতি তিনি খোলামেলা বলেন যে, সিটি নির্বাচনে তার আগ্রহ থাকলেও আ’লীগের দলীয় প্রার্থীতার ওপর তার অংশগ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করে। তার ধারণা আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিন্তু তার মতে উদীয়মান এই নেতা এখনও রাজনৈতিক দূরদর্শীতা সম্পন্ন নয়। এ ছাড়া তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বেমানান। অথচ সর্বশেষ যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে আ’লীগের প্রার্থী কে হচ্ছে তা তিনি আমলে না এনে কিভাবে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করা সহ নির্বাচনী প্রস্তুতিতে অগ্রসর হয়েছেন জোরালো ভাবে। তবে অপর একটি সূত্রের ধারণা, আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে খান মামুনের সম্ভাবনা প্রবাল হয়ে ওঠায় সরোয়ারের নির্বাচন নিয়ে এই চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটেছে।
কিন্তু খান মামুন নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা জানালেও দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে যে কথা শোনা যাচ্ছে তা কৌশলে এড়িয়ে যান। ফলে আ’লীগের ঘরে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত, সাদিক আব্দুল্লাহর মতো শক্তিশালি প্রার্থীকে টপকে অন্য কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে পাল্টে যাবে বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে অনেক দিনের হিসাব নিকাশ।”
শিরোনামরাজনীতির খবর