পিরোজপুর: উপজেলা ভাতা বিতরণ কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী হিসেবে পরিচয়দানকারী সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল খালেক। মন্ত্রনালয়ের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবা অফিস এ বছরের জুন মাস থেকে আ.খালেকের নামে ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করে। বিষয়টি জানার পর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তার সম্মানী ভাতা বন্ধের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। প্রায় চার মাস অতিাহিত হয়ে গেলেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. জাহিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আব্দুল খালেক সেনা বাহিনীর সাজোয়া ডিভিসনে কর্মরত থাকা অবস্থায ৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলো। তিনি জানান ৭৫ পরবর্তী সময় আ.খালেক ওরফে ট্যাঙ্ক খালেক তার মাহমুদকাঠির বাড়ি এসে নিজেই দম্ভোক্তির সাথে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা বলে বেড়াতেন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের বাহ্বা কুড়াতেন। পরে তিনি ৭৮ সালে কর্নেল রশিদ ও ফারুকের মাধ্যমে লিবিয়া চলে যান এবং সেখানে ৭/৮ বছর থাকার পরে দেশে ফিরে আসেন।
সাবেক কমান্ডার কাজী সাখাওয়াত বলেন খালেকের পুরো পরিবার স্বাধীনতা বিরোধী। সুতরাং সে মুক্তিযোদ্ধা কিনা আমাদের সন্দেহ আছে। দুঃখজনক হলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনী হিসেবে জাহির করা ব্যক্তি ভাতা পাচ্ছে। আব্দুল খালেক গত ৩/৪ বছর ধরে সেনা প্রভিশনাল সনদ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির কারণে ভাতা বিতরণ কমিটি তার নাম কখনও অনুমোদন করেনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১১ মার্চ ভাতা বিতরণ কমিটির সভায় তার নাম প্রত্যাখান করা হয়। তারপর কোনও এক অদৃশ্য শক্তির জোড়ে মন্ত্রনালয়ের আদেশের বরাত দিয়েে এ বছরের ২৯ মে পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তরের চিঠির নির্দেশে তাকে ভাতাভোগীর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এমন খবর জানার পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে গত ১৫ জুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। মন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরূপকাঠি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। ২১ জুন মন্ত্রীর ওই আদেশ পেয়ে ইউএনও বিষয়টির তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, তদন্ত কাজ শুরু করছি। তবে এখান থেকে আব্দুল খালেকের নামে আপত্তি দেয়ার পরেও তার ভাতা চালু হওয়ার বিষয়টি উপর ওয়ালাদের নির্দেশে করতে হয়েছে। সে কারণে ভেবে চিন্তে এগোতে যেয়ে তদন্ত কাজে একটু দেরী হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে আরো বলেন- একজন সামান্য সিপাহীর পক্ষে এটা কী করা সম্ভব?
টাইমস স্পেশাল, পিরোজপুর