বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) রেজিষ্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মহিলা কর্মকর্তা যৌন হয়রাণীর অভিযোগ এনে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে- অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ পাওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মনিরুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়ার হয়ে ওঠে।’
অর্থের বিনিময় বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নারী কর্মকর্তাদের যৌন হয়রাণী করতেও পিছপা হন না তিনি।’
“সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রাণীর অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মকর্তা ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। তার দেয়া অভিযোগ অনুযায়ী ২০১৩ সালে ওই নারী কর্মকর্তার সাথে তার স্বামীর ডিভোর্স হয়ে যায়।”
এরপর থেকে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করা এবং স্বামীর সাথে সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠা না করার জন্য রেজিষ্ট্রার মনিরুল ইসলাম তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করতে থাকেন।’
ওই নারী কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে নানাভাবে প্রলুদ্ধ করার চেষ্টা করেন রেজিষ্ট্রার। বিভিন্ন সময় তিনি ওই নারী কর্মকর্তার শরীর নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করার পাশাপাশি কুপ্রস্তাবও দিতেন। ওই নারীর সাথে রেজিষ্ট্রারের অসৌজন্যমূলক আচরণ চোখ এড়ায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর।’
বিষয়টি এতদিন শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি নিজের ইজ্জত বাচাঁতে রেজিষ্ট্রারের এই কুকীর্তির কথা লিখিত আকারে ভিসিকে জানান যৌন হয়রানীর শিকার ওই নারী।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইমানুল হক বরিশালটাইমসকে জানান, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। এমনকি কোন অভিযোগ তদন্তে প্রমান না হওয়া পর্যন্ত সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।’’
কিন্তু নারীলোভি রেজিষ্ট্রার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেড়িয়ে এসেছে আরও অনেক নতুন তথ্য। ভোলার মনপুরার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম শিক্ষা জীবনে কোন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অর্জন করতে পারেননি।’
সকল পরীক্ষায় তিনি শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ১৯৮১ সালে এসএসসি পাশ করে অনিয়মিতভাবে ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি।
‘ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তিনি শিবির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন বলে শোনা যায়। শিক্ষা জীবন শেষ করে মনিরুল ইসলাম কুমিল্লার একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা শুরু করেন।’
পরবর্তীতে কুমিল্লা জেলা জামায়াতের আমির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ মো. তাহের’র সুপারিশে আলহাজ্ব নুর মিয়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।’
২০১৩ সালের ৩০ জুন তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিষ্ট্রার পদে যোগদান করেন। ডেপুটি রেজিষ্ট্রার ও চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার হিসেবে মাত্র দেড় বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিষ্ট্রার পদে চাকুরি পান তিনি।’
অথচ চাকুরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল রেজিষ্ট্রার পদে নিয়োগ পেতে হলে তাকে ডেপুটি রেজিষ্ট্রার পদে নুন্যতম ৫ বছরের চাকুরীর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দেয়া শর্ত রক্ষা হয়নি।’
মনিরুল ইসলামের নিয়োগকে অবৈধ দাবি করে তাকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি উঠেছে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইমামুল হক জানান, সিলেকশন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর বেশী তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।’
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর