বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫২ অপরাহ্ণ, ৩১ মে ২০২৩
বরগুনায় পানিতে ডুবে ৬ বছরে ১১৬ শিশুর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: উপকূলীয় জেলা বরগুনায় পানিতে ডুবে গত ৬ বছরে (২০১৮ জানুয়ারি-২০২৩ মে) ১১৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে জেলায় বর্তমানে এভাবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। বরগুনায়ও তা-ই। ৫ বছরের কম বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। কিন্তু গত ৬ বছরে এই জেলায় নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর তেমন তথ্য নেই।
এক জরিপে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটি চোখে পড়ে না। সে কারণে আলোচনাতেও আসে না।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বরগুনায় ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ২৮, ২০২১ সালে ১৬, ২০২২ সালে ১০ ও ২০২৩ সালের চলতি মে মাস পর্যন্ত তিনজনসহ মোট ১১৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বরগুনায়।
হেলথ ও ইনজুরি সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুদের ক্ষেত্রে ০-১৭ বছর বয়সীদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাই বেশি ঘটে। প্রতি বছর ১৪ হাজারের মতো শিশুর এভাবে মৃত্যু হয়। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বরিশালটাইমসকে বলেন, এই বিষয়টির গুরুত্ব সরকারি পর্যায়ে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সমস্যাটি তেমন গুরুত্ব অনুযায়ী জরুরিভাবে মোকাবিলা করা হয়নি।
প্রতি বছর পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়। তাই এই দিবসটির মাধ্যমে অনেক মা-বাবাসহ অভিভাবকরা সচেতন হবেন। এভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বাবা-মা সচেতন হলেই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ঘটনা কম ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের অনেক পুকুর-ডোবা শিশুদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে আছে। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা কম। আবার সাঁতার শেখানো বা প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মীর অভাবও অনেক। এ কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যু কমছে না।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সুদৃষ্টির অভাব আছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ইইসিডি প্রকল্পের গবেষক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সন্তানকে সাঁতার শেখানোর কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা বলেছে তাদের নির্দেশিকায়। এগুলোর মধ্যে পুকুর-ডোবায় বেড়া দেওয়া এবং স্কুলগামী শিশুদের সাঁতার শেখানোর কথা বলা আছে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বরিশালটাইমসকে বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব।
এছাড়া বরগুনায় অধিকাংশ পরিবারের বাড়ির উঠানের পাশে বড় বড় পুকুরসহ খাল-বিল থাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু থামছে না। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা এস এম রফিকুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু হওয়ার প্রধান কারণ হলো সাঁতার না শেখা।
সব সময় খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন একা একা কোনো জলাধারের কাছে না যায়। বাড়ির পাশের অপ্রয়োজনীয় ডোবা বা গর্তগুলো ভরাট করা ও বাড়ির পুকুরের চারপাশে বেড়া দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া শিশুকে একা পানিতে নামতে দেওয়া যাবে না।