বরগুনায় পৈত্রিক ভিটা ও জমি উদ্ধারে এক পরিবারের আমরণ অনশন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মোঃ আব্দুল মালেক বিশ্বাস ও তার পরিবার পৈত্রিক ভিটামাটি ও জমি উদ্ধারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আমতলী প্রেসক্লাবের সামনে তারা এ অনশনে বসেন।
আব্দুল মালেকের অভিযোগ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা ভুয়া দলিল তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তার পৈত্রিক ভিটামাটি দখল করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ওই পৈত্রিক ভিটা ও জমি ফিরে পেতে সহযোগিতা কামনা করেছে ওই পরিবার।
জানা গেছে, উপজেলা উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের আলী হোসেন বিশ্বাস ২০০২ সালে ৬০ শতাংশ জমি রেখে মারা যান। তার মৃত্যুতে স্ত্রী মাহিনুর বেগম ও তার ছেলে আব্দুল মালেক বিশ্বাস ওই সম্পত্তির মালিক হন।
কিন্তু আব্দুল মালেক বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে বসবাস করার সুযোগে হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা জাল দলিল করে জোরপূর্বক তার পৈত্রিক ভিটা ও জমি দখল করেন এবং ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মালেক।
ওই পৈত্রিক ভিটা ও জমি ফিরে পাওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার আমতলী প্রেসক্লাবের সামনে আব্দুল মালেক বিশ্বাস ও তার মা মাহিনুর বেগম, স্ত্রী কল্পনা বেগম ও এক বছরের শিশু কন্যা ফাহিমাকে নিয়ে আমরণ অনশনে বসেন।
দখলকৃত পৈত্রিক ভিটামাটি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছে ওই পরিবার। তবে আমরণ অনশন শুরুর দেড় ঘণ্টা পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে আপাতত অনশন ভেঙ্গেছে পরিবারটি।
ভুক্তভোগী মোঃ আব্দুল মালেক বিশ্বাস কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর সব জমি ভুয়া দলিল হইর্যা লইয়্যা গ্যাসে চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা। ওই জমিতে মোর বাপদাদার ভিটা ছিল। হেই জায়গায় মুই ঘর হইর্যা থাকতাম।
অ্যাহন মোর কিচ্ছু নাই। মুই গুরাগারা লইয়্যা রাস্তায় থাহি। মোর বাহের জমিতে চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর নামে কলেজ হরছে। মুই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোর বাদ দাদার ভিটামাটি ফিরা চাই।’
আব্দুল মালেক বিশ্বাসের বৃদ্ধা মা মাহিনুর বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর নামে ৫ কড়া জাগা আলহে, হ্যা জাগাও চেয়ারম্যান দহল হইর্যা লইয়্যা গ্যাছে। মোর জাগা যদি ফেরত না দেয় মুই এইহানে বইস্যাই মইর্যা যামু।’
হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা ওই জমি দখল করে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে আমরণ অনশনে বসিয়েছেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, এখানে আমার ষড়যন্ত্র করার কিছুই নেই। সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মৃধা জমি দখল করে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই ভুক্তভোগীরা জমি উদ্ধারে অনশন করেছেন।
আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, শুনেছি আমরণ অনশনে বসেছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরণ অনশনে বসার কথা শুনেছি। কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা, বিভাগের খবর