বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:২১ অপরাহ্ণ, ০৮ মে ২০১৬
বরিশাল: ভোলার চরফ্যাশনে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম বরিশালটাইমস পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশের পড়ে টনক নড়লো ভোলা পুলিশ প্রশাসনের। শনিবার সকালে প্রকাশিত সংবাদটি দেখে আর নিশ্চুপ থাকতে পারলেন পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। ঘটনা সংশ্লিষ্ট চরফ্যাশন থানা পুলিশকে নিয়ে রুদ্ধদার অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করলেন নারী নির্যাতনকারী যুবলীগ নেতার ভাইকে।
কিন্তু নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত উপজেলা যুবলীগ সদস্য কামরুল ইসলামকে কাজল রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক্ষেত্রে পুলিশের দাবি হচ্ছে, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত কাজল গাঢাকা দিয়েছে, যে কারণে তাকে গ্রেপ্তারে সফলতা আসছে না। তবে তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।’
এমনকি তার পলাতক থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের সকল থানাগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া প্রযুক্তিগত দিক পর্যালোচনা করেও তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।’
নির্যাতনকারী যুবলীগ সদস্য কামরুল ইসলামকে কাজল উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নজির মাঝিরহাট এলাকার নজির মাঝির ছেলে। পুলিশী অভিযানে গ্রেপ্তার তার ভাই জামাল মাঝিকে শনিবারই জেলহাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।’
পুলিশ জানায়, চরফ্যাশন উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. কামরুল ইসলাম কাজলের সাথে প্রায় এক বছর ধরে পাশ্ববর্তী এলাকার মো. মনিরের স্ত্রী নুর নাহার বেগমের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। সেই বিষয়টি স্বামী মনির টের পেলে নাহারকে তার বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে চলে যান। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাজল আর নুর নাহারের পরকীয়া প্রেম সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠে।’
এ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কাজল তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভোলা, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন বাসায় রেখে স্বামী-স্ত্রীর মতো রাত কাটিয়েছেন।
কিন্তু বধুবার বিয়ের দাবি নিয়ে গেলে কাজল ও তার পরিবারের লোকজন ওই নারীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ির পাশে একটি সুপারী গাছের সাথে বেঁধে কয়েক দফা মারধর করে ফেলে রাখে। এতে ওই নারী গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে চরফ্যাশন সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
এক্ষেত্রে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয়রা অবগত থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। কারণ যুবলীগ নেতা কাজল স্থানীয়ভাবে অধিক প্রভাবশালী। যে কারণে স্থানীয় সাংবাদিকরাও বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সাহস দেখায়নি।
কিন্তু বিষয়টি ঘটনাচক্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বেশ আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফলশ্র“তিতে গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার নির্যাতিত সেই নারী নুর নাহার বেগমের ছবি সংগ্রহ করে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেন।
মূলত সেই পোষ্টটি থেকে অবগত হওয়ার পরেই বরিশালটাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য-উপাত্ত। সেই সাথে ধরা পড়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অবহেলার বিষয়টিও।’
যে বিষয়টি নিয়ে শনিবার সচিত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম বরিশালটাইমস। সেই প্রতিবেদনে পুলিশের ভুমিকাও তুলে ধরা হয়। আর এতেই নড়েচরে বসে ভোলা পুলিশ প্রশাসনের উচ্চমহল। যার দরুণ সকালে যুবলীগ নেতার বাড়িতে রুদ্ধদার অভিযান চালিয়ে মামলার ২নম্বার আসামি গ্রেপ্তার করা হয়।’
ভোলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, নির্যাতিত নারী কামরুল ইসলাম কাজল এবং তার ভাইসহ ৬জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। কিন্তু ঘটনার পরপরই অনেকে গাঢাকা দিয়েছে। যে কারণে গ্রেপ্তারে সফলতা আসছে না। তবে মামলার দ্বিতীয় নম্বার আসামিকে গ্রেপ্তারে সফলতা এসেছে। এখন বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’