৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালবাসীর স্বপ্নের ‘পদ্মাসেতু’র ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০২ অপরাহ্ণ, ৩১ মে ২০১৭

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথে পদ্মাসেতু। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে কাঙ্খি এই সেতুর কাজ।

সংশ্লিষ্ট জানিয়েছে বর্তমানে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ।

শরীয়তপুরের জাজিরা-মাওয়া পয়েন্টের পদ্মার তীরে চলছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের কাজ। এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের পথে পদ্মাসেতু।

দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করছে তিন হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি শ্রমিক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পদ্মাসেতু দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন ও ট্রেন। এই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সবকিছু। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ।

শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে নির্মিত হতে যাচ্ছে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্র, হাইটেক পার্ক, জাহাজ নির্মাণের কারখানা, সোলার প্লান্টসহ বড় বড় সব প্রকল্প। এরই মধ্যে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সেতুর আশেপাশে নির্মিত হয়েছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার, সার্ভিস এরিয়া, পুনর্বাসন প্রকল্প। জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজা নির্মাণকাজও প্রায় শেষ। সেতুর কাজ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক প্রস্তুত।

সংযোগ সড়কের জন্য কাওড়াকান্দি ঘাট সরিয়ে আনা হয়েছে কাঁঠালবাড়িতে, যার ফলে ফেরিপথে কমে এসেছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। জাজিরা প্রান্তের পদ্মাসেতুর মূল সংযোগ সড়ক ও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে যোগ করতে আট কিলোমিটার সার্বিক সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এর ফলে ফেরি থেকে নেমে যানবাহনগুলো যেতে পারবে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে।

পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়ক খুলে দেয়া হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার এক বছর পরও রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে অব্যাহত রাখতে হবে ফেরি যোগাযোগ। পদ্মাসেতুর সুফল ভোগ করবেন দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাঝিরঘাট ও কাওড়াকান্দিতে লঞ্চ, স্পিড বোট এবং ছোট ছোট ফেরিতে ২১ জেলার কোটি মানুষের যাতায়াত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসেন পদ্মা সেতুর এলাকা ঘুরে দেখতে। তুলছে ছবি, তুলছেন সেলফি। তুলে আপলোড করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

পদ্মাসেতু জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে ঘুরতে আসা আনিসুর রহমান, বেবি আক্তার ও জুয়েল সাংবাদিকদের বলেন, আমারা শরীয়তপুর সদর থেকে পদ্মা সেতুর এলাকা ঘুরতে এসেছি। অনেকের মুখে শুনেছি পদ্মা সেতু নাকি করতে পারবে না বর্তমান সরকার। কিন্তু এসে দেখলাম খুব দ্রুত গতিতে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। এখানে না আসলে এমন অভিজ্ঞতা হতো না। ভাবতে ভালো লাগছে, আর এক বছর পরেই পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে পারবো।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। এরই মধ্যে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া টোলের কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরা ও মাওয়ার দুই প্রান্তেই দুটি পরিপূর্ণ পুলিশ স্টেশন বা থানা কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে। এর কাজটুকু শেষ হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে।

তিনি আরও জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে সার্বিক নিরাপত্তা বিধান কল্পে ৯৯ কম্পোজিট বিগ্রেড ৯৯ দশমিক ৪৪ একর জমিতে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় তৈরি হচ্ছে স্থায়ী সেনানিবাস। এছাড়া পদ্মা সেতুর পিলারে (পিআর) সুপার স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজ আগামী জুন থেকে শুরু হবে।

৪২টি পিলারে ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২০টি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এ ২০টি স্প্যান পিলারের উপর স্থাপন করতে করতে বাকি ২১টি স্প্যানও তৈরি হয়ে যাবে। স্প্যান স্থাপন শুরু হলে সময় বেশি লাগবে না। ১২ দিন পরপরই একটার পর একটা স্প্যান বসতে থাকবে বলে জানান তিনি।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন- পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে শরীয়তপুরবাসীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। শরীয়তপুরের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে। তৈরি হবে শিল্প কারখানা। বাড়বে পর্যটন, যুব সমাজ খারাপ কাজ ছেড়ে কর্ম জীবনে ঢুকে পড়বে। সমাজের বেকারত্ব হ্রাস পাবে।”

25 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন