স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি বরিশালের। উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার এ অঞ্চলে দরিদ্রতার হার বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদী ভাঙনসহ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে মানুষ ছুটছে অন্যত্র।
বিগত ৪৫ বছরেও এখানে তেমন কোনো শিল্প কল-কারখানা গড়ে ওঠেনি। দু’যুগ আগে বিভাগ ঘোষণা হলেও অনেক বিভাগীয় দপ্তর এখনো খুলনায় রয়ে গেছে। এখানকার মানুষকে এখনো ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন, পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানি তেল ক্রয়-বিক্রয়ের বিস্ফোরক লাইসেন্স অনুমোদন ও নবায়নের জন্য ছুটতে হচ্ছে খুলনায়। পোস্ট অফিসের নিবন্ধনের জন্য যেতে হয় খুলনায় পিএমজি(পোস্ট মাস্টার জেনারেল) কার্যালয়ে। আমদানি পণ্য শুল্কায়নের জন্য এখানকার ব্যবসায়ীরা এনবিআর’র কর্মকর্তাদের কাছে বছরের পর বছর ঘুরে স্থানীয় ভ্যাট অফিসকে কাজে লাগিয়ে শুল্কায়ন করতে পারছেন না। তাদেরকে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য শুল্কায়নের জন্য পণ্যবাহী জাহাজ নিয়ে পুনরায় ছুটতে হচ্ছে খুলনায়।
এই শহরের রূপ-সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে এক সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বরিশালকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ হিসেবে। শহরের সেই রূপ-সৌন্দর্য দিন দিন ম্লান হলেও প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন সিটি মেয়র থাকা অবস্থায় পাঁচ বছরে নগরীর ২৫কি.মি পুরনো এলাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছিলেন। গত তিন বছরে তা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এ নগরীর উন্নয়নে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে সামান্য বরাদ্দ এসেছে তারও যথাযথ ব্যবহার হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভা আমলে এখানে সোডিয়াম বাতি ও সড়কের মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়েছিল। ওই বাতি অচল সচল করার নানা টালবাহানায় ভাউচার দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে লোপাট হয়েছে। সেই সিগন্যাল বাতির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। সদর রোডস্থ বিবির পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে ছয়তলা সুপার মার্কেট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস ওই প্রকল্পের জন্য ৫লাখ টাকা অনুদান দেন। কিন্তু সেখানে কোনো মার্কেট নির্মাণ হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের জন্মলগ্ন থেকেই মেয়ররা দায়িত্ব পালনকালে প্রতিটি বাজেট বক্তৃতায় ট্রাক টার্মিনাল, আধুনিক পার্ক, বৃদ্ধাশ্রম ও কর্মজীবী হোস্টেল নির্মাণের ঘোষণা দিলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
নদী বেষ্টিত এ অঞ্চলের নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় নৌ-পথেরও যোগাযোগ বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যে সব নদী ভরাট হয়ে গেছে সে সব এলাকায় গড়ে ওঠেনি সড়ক যোগাযোগ। ফলে এ সব এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এলাকার উন্নয়নের বড় বাধা হচ্ছে আর্থিক সংকট। সরকারি অনুদান মিলছে না। নিজস্ব আয়ের চেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেশি। ব্যয় বেড়েছে বহু গুণ। সেই তুলনায় সরকারি বরাদ্দ বা রাজস্ব বাড়েনি। ফলে স্বাভাবিক কারণেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
টাইমস স্পেশাল, স্পটলাইট