৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালের পুলিশই যখন অপরাধী !

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

বেড়েই চলছে পুলিশের অপরাধের মাত্রা, মাদক বিক্রি, অসৎ আচরন, চোরা চালানের সাথে সম্পৃক্ততা, ঘুষ বাণিজ্য, সিনিয়র অফিসারদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচারন সহ ফৌজদারী মামলায় পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ সদস্যরা। সুশীল সমাজ বলছে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার কারনে ওই সব অনাকাংখিত ঘটনার সৃষ্টি। যার প্রধান কারন রাজনৈতিক ক্ষমতা। যাতে করে নিজ বাহিনীর নিয়ম ও সুনাম ভেঙে নিজেদের মত করে চলছে তারা। এসব কারনে সিনিয়র পুলিশ কর্তারা ওই সব অপরাধীদের ও আইনের আওতায় আনছে।

 

বিভাগীয় মামলা সহ পুলিশ অধ্যাদেশের বিভিন্ন আইনে কিছু সংখ্যক পুলিশ শাস্তির আওতায় আসলেও প্রকৃত অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। ইউনিট প্রধান এর সততা আর নিষ্টার কারনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সুনাম বাড়ানোর সময় চিহ্নিত অপরাধী পুলিশ অফিসারগন তাদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। এরা যেকোন অফিসারের আমলেই বীরের সাথে রাম রাজত্ব করে যাচ্ছে। আর এ ঘটনাগুলো যতদুর জানা যায় ঠিক তারই শাস্তির ব্যবস্থা, বাকিগুলো খতিয়ে দেখা না হওয়ার জন্য পুনরায় সেই অপরাধের সাথে জড়িয়ে মাত্রা আরো বাড়িয়েছেন। এর ধারায় চলতি বছরে অর্থাৎ ২০১৬ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপরাধে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে ৬ জন। এছাড়াও ছোট ছোট অপরাধে ক্লোজ, শাস্তিমূলক বদলী সহ তিরস্কার করা হচ্ছে।

 

তথ্য মতে চলতি বছরে যে ৬ জন বরখাস্ত হয়েছে তার মধ্যে এসআই রয়েছে ২ জন, এএসআই ১ জন, টিএসআই ১ জন ও কনস্টেবল রয়েছে ২ জন। এদের মধ্যে ১ জন বাদে বাকিরা সবাই মাদকের সাথে জড়িত ঘটনা কে কেন্দ্র করেই বরখাস্ত হয়েছে। যদিও গত ২ বছরে এর সংখ্যা কয়েক ডজনে পরিনত হয়েছে। বর্তমান কমিশনার যোগদানের পর এ রকম ঘটনা নিয়ন্ত্রনের সর্বাত্মক চেস্টা চালানো হচ্ছে। তথ্য মতে, কোতয়ালী মডেল থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসআই আঃ মান্নান হোটেলের বোর্ডারদের জিম্মি করে অর্থ বানিজ্য সহ মারামারির একটি মামলায় আসামী ধরে এনে পরিবারের কাছে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করায় আসামীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা পাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। নগদ টাকা সহ এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করে সাথে থাকা ইয়াবা ও ফেন্সিডিল গায়েব করে ফেলার অপরাধ পত্রিকায় প্রকাশের পর সত্যতা পাওয়ায় ডিবির সদ্য পদোন্নতি পাওয়া এএসআই আঃ সালাম ও কনস্টবল সালামকে বরখাস্ত করা হয়।

 

এভাবেই অপরাধের কারনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বরখাস্ত ছিল সাবেক ডিবি সদস্য আল আবিদ। বরিশাল আদালতে কর্মরত থাকা অবস্থায় টিএসআই হারুনের অসৎ আচরন সহ নানান অপরাধে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরিশালে যোগদানের পরই ছোট ছোট অপরাধের নায়ক এসআই রেহাল কোতয়ালী থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সরকারী পুলিশের মটর সাইকেল দীর্ঘ ৬ মাস যাবত এক লোহা ব্যবসায়ীকে চালাতে দেয়ার অপরাধে এয়ারপোর্ট থানায় শাস্তি মূলক বদলী করা হয়েছিল। সেখানে বসে মাদক সহ নানান অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কারনে বন্দর থানায় বদলী করা সহ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ হিসেব শুধুমাত্র বরখাস্ত হওয়ার বিষয়। এছাড়াও ক্লোজ করার মত ঘটনা রয়েছে বহু।

 

এক হিসাব মতে দেখা গেছে, ২০০৪ সালের ১০ মে বরখাস্ত করা হয় কনস্টবল মিসলুকে। কারন ত্রিশ গোডাউন এলাকায় আতিক নামের এক ব্যক্তির কাছে ২ পিস ইয়াবা পেয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। যা পরবর্তীতে তদন্তে সত্যতা পায়। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে ২য় বিয়ে করার অপরাধে ৮ মে তাকে বরখাস্ত করা হয়। মিসলুর সাথে পুলিশ সদস্য গোলাম মোস্তফাও বরখাস্ত হয়েছিল। হোটেলে বোর্ডারদের জিম্মি করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপরাধে সাবেক সিটিএসবি সদস্য সুমন চন্দ্রকে বরখাস্ত কর হয়েছিল। ওই বরখাস্তের আদেশ তুলে নেয়ার পর তাকে ডিবিতে বদলী করা হয়েছিল। ডিবিতে থাকা অবস্থায় হোটেলে উঠে নারী নিয়ে ফুর্তি ও ইয়াবা সেবনকালে এসআই দেলোয়ার তাকে আটক করে।

 

তখন তিনি দেলোয়ারের উপর চড়াও হলে সিনিয়র জুনিয়র মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বর্তমান পর্যন্ত সুমন বরখাস্ত রয়েছে। ২৫ মে ঘটনার সাথে জড়িত না থাকলে আদালতে মিথ্যা অভিযোগে চার্জসিট দেয়ার বহুল বিতর্কিত এসআই চিন্ময়কে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এছাড়াও বরিশাল মেট্রোপলিটনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যে ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে তা হল ৭৭ লাখ টাকা ঘুষ কেলেংকারীতে বিএমপি তৎকালীন ডিসি (উত্তর) মোঃ জিল¬ুর রহমান সহ ১০ জন বরখাস্ত হয়েছিল। ওই ঘটনা শুধু বরিশালেই নয় সারা বাংলাদেশে আলোড়ন হয়েছিল।

 

কারন ঘুষ কেলেংকারীর ঘটনায় বরিশালে প্রথম কোন এসপিকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল। তাছাড়া ডিআইজি সামসুউদ্দিন পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন বিবির পুকুর পাড়ে বসে ৩ স্বর্ন কারবারীকে আটক করে ১৭ লাখ টাকা গ্রহন করেছিল তৎকালীন ডিবির এসি ভাস্কর সাহা, এসআই আহসান করিব সহ কয়েকজন। অপর একটি আলোচিত ঘটনার সৃষ্টি করে কাউনিয়া থানার থাকাকালীন এসআই ওয়ারেস। রংপুরে প্রথম স্ত্রী সন্তান থাকার পর বরিশালে ২য় বিয়ে করে। সেই স্ত্রীকে নির্যাতন করার অপরাধে তাকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল। একই সাথে আদালতে ফৌজদারী মামলা হওয়ায় হাজতবাস করেছিল সেই এসআই ওয়ারেস। নারী সংক্রান্ত ঘটনায় এসআই দেলোয়ারকে ক্লোজ হতে হয়েছিল। আর পুলিশের অপরাধ বেড়েই চলেছে

28 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন