১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে আত্মগোপনে আ.লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:০৯ অপরাহ্ণ, ১২ আগস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পরপরই স্থানীয় সরকারের অধীনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধিকাংশ মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের সাথে দেখা মিলছে না সাধারণ নাগরিকদের। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে রয়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

তবে এরমধ্যে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেসব উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন তারা মাঠে রয়েছেন। গত ৮ আগস্ট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির সভায় জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রি উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া তিনি নাগরিকদের পাশে থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায়ও কাজ করছেন। গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন মিয়াকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করতে দেখা গেছে।

তবে আওয়ামী লীগপন্থি বরিশাল সিটি ও পৌর মেয়র, কাউন্সিলর এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দেখা মিলছে না বেশিরভাগ জায়গাতেই। অনেকস্থানে মেম্বারদেরও দেখা মিলছে না। এরমধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের না পেয়ে বিপাকে পরেছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পরই বরিশাল সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবন, পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ, নগর ভবন, সার্কিট হাউস, বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, বরিশাল ক্লাব, বেলর্স পার্ক, শহীদ মিনার চত্বরের সৌন্দর্য্য বর্ধণের মালামাল ভাঙচুর করে লুটপাট, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নগরীর আওয়ামী পন্থি কাউন্সিলরদের কার্যালয়, স্থানীয় সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়গুলোতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বিশেষ করে বিক্ষুব্ধদের দেওয়া আগুনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন পুড়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার এবং গত ৪ আগস্ট নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এরপর থেকেই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সাথে আত্মগোপনে চলে যায় অধিংকাংশ জনপ্রতিনিধিরা। যদিও ছাত্র-জনতা বলেছেন, যারা নানান অপকর্মের সাথে নিজেদের জড়িয়ে মানুষকে শাসকের রূপে শোষণ করেছে তারাই আত্মগোপন করেছে।

অপরদিকে আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের স্বজনরা দাবি করে বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা টার্গেট করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তাদের সম্পদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণেই অনেকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সাহস পাচ্ছেন না। যেকারণে তারা কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।

আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপুল দাসের ভাই মৃদুল দাস বলেন, সরকার প্রধানের পদত্যাগের পরপরই ৫ আগস্ট আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের পাঁচটি কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। যেকারণে নিরাপত্তাহীনতার অভাবে চেয়ারম্যান পরিষদে যেতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দাস জানান, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আত্মগোপনে থাকায় জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নাগরিক সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সেবা পেতে ভূক্তভোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের তাদের কার্যালয়ে যোগদানের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

206 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন