১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় আসেন ব্রিটিশ নাগরিক মিস জিলিয়ান এম রোজ। বাংলাদেশে পা রেখে কয়েক বছর পর ফিরে গেলেও ১৯৭৪ সালে আবারও চলে আসেন। ৩৭ বছর আগে সেবা দিতে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে পা রাখেন তিনি।
পেশায় জিলিয়ান এম রোজ একজন নার্স। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে ৫৪ বছর ধরে সেবা দিয়ে চলেছেন। যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এভাবেই সেবা দিয়ে যাবেন- এমনটাই স্বপ্ন তার।
এদেশের প্রেমে পড়ে ৫৪টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। বাংলার মাটিতেই শেষ ঠিকানা চান চিরকুমারী এই মহানুভব মানুষটি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজ হাতে বিভিন্ন রোগীকে সেবা দেন। এভাবেই চলছে লাল-সবুজের দেশের সঙ্গে তার হৃদয়ের মিতালী। তার হৃদয়জুড়ে এখন বাংলাদেশের প্রতি গভীর প্রেম।
অন্য দেশের নাগরিক হয়েও এ দেশের মানুষকে পরম মমতা ও যতেœ সেবা দিয়ে মন কেঁড়েছেন তিনি। সবার কাছে প্রিয়মুখ এখন নিভৃতচারী জিলিয়ান এম রোজ। চলনে-বলনে বাঙালিয়ানা লুসির একটিই চাওয়া বাংলার মাটিতে শেষ বিদায়।
বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারায় বেশ খুশি তিনি। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এভাবে মানুষকে সেবা দিয়ে যাবেন। এদিকে তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন বৃদ্ধাশ্রম। তার প্রত্যাশা বাংলাদেশ তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেবে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটি ৮৮ বছরে পা রাখবেন।
গত বছর দেশে ফেরার কথা থাকলেও এখানকার প্রকৃতি, মানুষ ও মাটির ভালোবাসা মুগ্ধ করে তাকে। যেখানে তার পরিবার একাধিকবার দেশে ফিরে আসার কথা জানালেও তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
মিস জিলিয়ান এম রোজ সাংবাদিকদের জানান, সরকার যদি আমাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেই, তাহলে আমার সম্মান বাড়বে। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এভাবে সেবা দিয়ে যাবো। সেবা দিতে আমার ভালো লাগে। পৃথিবীতে এসেছি সেবা দিতে। বৃদ্ধাদের জন্য কেউ কিছু করে না। তাই আমি নিজে একটি বৃদ্ধাশ্রম খুলেছি। তারা যেন ভালোভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন ১৯৬৪ সালে এই দেশে আসি। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল। পরে আমি মালয়েশিয়ায় চলে যায়। সেখান থেকে আবারো ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সেবা দেওয়ার জন্য চলে আসি। খুলনায় বেশ কয়েক বছর বিহারি ক্যাম্পসহ গ্রামাঞ্চলে সেবা দিয়ে ১৯৮১ সালে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে যোগদান করি।
বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র নার্স নীলসুরি সরিন সাংবাদিকদের জানান, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা তিনি মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছেন। নিজের জন্য কোনো কিছু করেন না তিনি। নিজ উদ্যোগে এখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছেন। যেখানে বর্তমানে ১৫ জন বৃদ্ধা আছেন। তিনি গ্রামে ঘুরে বাড়ি বাড়ি সেবা দিয়ে আসেন। রাত-দিন যে কোনো সময় ডাকলে তিনি ছুটে যান সেবা দিতে। অনেক গরিব রোগী তার কাছ থেকে সেবা ওষুধ বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন।
বল্লভপুর গ্রামবাসী জানায়, জিলিয়ান এম রোজ আমাদের কাছে দেবতার মতো। যে কোনো সমস্যায় তার কাছে এলে সমাধান পাওয়া যায়। এই এলাকার মানুষ তাকে মা হিসেবে ডাকে। বাগুয়ান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে জিলিয়ান এম রোজ এই অঞ্চলের মানুষকে সেবা দিয়ে আসছেন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি তার দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। এ ধরনের মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে নিজের কাছে ভালো লাগবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশকে যে মানুষটি এতো ভালোবেসেছেন, নিশ্চয়ই বাংলাদেশও তাকে ভালোবাসবে বলেই আশা প্রকাশ করছি। জিলিয়ান এম রোজ যদি আমাদের কাছে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তাহলে আমরা সরকারের কাছে তার আবেদনটি তুলে ধরবো। এছাড়াও সবধরনের সহযোগিতা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।
শিরোনামবরিশালের খবর