বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি অফিস নিয়ন্ত্রণে অনেক আগেই নিয়েছিল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন নামে একটি কথিত সংগঠন। এমনকি সেখানে ট্রাক থামিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে সংগঠনটি চাঁদাবাজি। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হলে শুরু হয় তোলপাড়।
সদর উপজেলার লাহারহাট ফেরিঘাটের এই চাঁদাবাজি ও অনিয়ম বন্ধের বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যার অংশ হিসাবে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে সেখানে সংশ্লিষ্ট বন্দর (সাহেবেরহাট) থানা পুলিশের একটি টিম মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু এতে কোন সুফল আসেনি। বরং শ্রমিক ইউনিয়নের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও ফের জড়িয়ে পড়েন চাঁদাবাজিতে। কারণ হচ্ছে- বন্দর থানা পুলিশের যে কর্মকর্তা সেখানে ডিউটি পাচ্ছেন তিনিই শ্রমিক সংগঠনের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। যার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে শুক্রবার (০৮ জুন)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- রাজস্ব আদায়ের নামে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) প্রতিটি ট্রাক থেকে ২ হাজার ২’শ টাকা নিচ্ছেন। অথচ তাদের দেওয়া ভাউচরে বলা হয়েছে রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে ১৮শ’ ৫০ টাকা।
এই কাউন্টারের পাশেই রয়েছে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের একটি চেয়ার ও টেবিল। এখানে প্রতিটি ট্রাক থেকে নেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। কিন্তু তাদের চাঁদা নেওয়ার কথা রয়েছে মাত্র ২০ টাকা। মূলত ফেরিঘাটের এই চাঁদাবাজি রোধ করার লক্ষে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে পুলিশের একটি টিম মোতায়েন করা হয়েছিল।
কিন্তু সেখানে পুলিশের কোন টিম না থাকলেও ছিলেনও উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যার এক পুলিশ কর্মকর্তা। তবে চাঁদাজির কিছুই তিনি দেখেননি। কারণ তার দেখারও কথা না। শ্রমিক সংগঠন ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারীরা যখন চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ঘুমমগ্ন।
শ্রমিক অফিসের ভেতরে একটি চৌকির ওপরে পাশে পোশাক রেখে তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। ওই সময় সেখানে সাংবাদিকদের অবস্থান চাঁদাবাজিতে বেঘাত ঘটালেও এসআই জিহাদুল কবির কিছুই শুনতে পারেননি।
কিন্তু একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন। লাফ দিয়ে উঠে পোশাক পরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় তিনি মোবাইল ফোন হাতে সাংবাদিকদের দেখে বলে ওঠেন ‘ওয়েট ওয়েট! একটু পরে ছবি তোলেন, আমি পোশাকটা পরে নেই।
পরক্ষণে তিনি জানালেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা হায়াদার তাকে এখানে ডিউটিতে পাঠিয়েছেন। যে কোন ধরনের চাঁদাবাজি বা অনিয়ম না হয়। কিন্তু ঘুমিয়ে অনিয়ম রোধ এমন প্রশ্নে রেগে গিয়ে এসআই কবির বলেন- বিরাক্ত কেন করছেন? প্রয়োজন হলে আপনে সাংবাদিক ডিউটি করেন।
দুই মিনিটের ওই ভিডিওচিত্র দেখে খোদ ওসিও ‘থ’ খেয়ে গেছেন। তবে তিনি পুরো বিষয়টি চেপে যেতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
এমতাবস্থায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- প্রতিদিন যে কর্মকর্তাই সেখানে ডিউটিতে যাচ্ছেন তিনিই সুবিধা নিচ্ছেন। কেউ চাঁদাবাজির টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন। আবার কেউ ডিউটি বাদ দিয়ে শ্রমিক অফিসের চৌকিতে বিশ্রাম নেন। ফলে ফেরিঘাটের চাঁদাবাজি ও জুলুম বন্ধে বরিশাল পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কোন উদ্যোগ কাজে আসছে না। কিন্তু এই ঘটনার পরে বরিশাল পুলিশ কী ভুমিকা রাখে সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।’’
শিরোনামবরিশালের খবর