বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৮ অপরাহ্ণ, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বরিশালে তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার ২২শ মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালের উজিরপুরের সাতলা এলাকার শিবপুর গ্রামে সাধারণ জনগণের জমি জবরদখলের মিশনে নেমেছে প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তারা এনজিওর আড়ালে মানুষের জমি দখল করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এদের ফাঁদে পড়ে জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে ২২শ মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনজিও প্রতিষ্ঠান ভোসড (প্যান্ডামিক ফিশারিজ লিমিটেড), অর্গানিক এগ্রো ফিশারিজ লিমিটেড ও অন্বেষা ফাউন্ডেশন (এনজিও লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে) এর প্রতারণায় উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বাসিন্দারা এখন নিঃস্ব প্রায়। তাদের ১৯৬ একর জমি জাল জালিয়াতি করে রেকর্ড করিয়ে দখলে নেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে এ সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
তারা কারো ৩ শতাংশ জমি কিনলে পরবর্তীতে ক্ষমতার জোড়ে পাশের জমিও দখল করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ও স্থানীয় ভূমি অফিস ম্যানেজ করে রেকর্ড করিয়ে নিচ্ছেন। আর এ কাজে ঢাকায় বসে কলকাঠী নাড়ছেন ভোসড এনজিওর মালিক সাইদুর রহমান। যিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। তার প্রভাবে বর্তমানে ওই এনজিওর পরিচালক পরিচয়দানকারী মোস্তাফিজুর রহমান তার নিজের নামে এ সকল জমি দখল করে নিচ্ছেন।
যদিও জমি দখলের প্রতিবাদে এখন ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনগণ। তারা গত শুক্রবার শিবপুর গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করেছে। দুপুরে ঘটনার সাথে জড়িত এনজিও ভোসড এর মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে তারা ঝাড়ু মিছিল করে। এ সময় তারা দোষী মোস্তাফিজুর রহমানের বিচার দাবি করেন।
সাতলা ইউনিয়নের ৩নং (শিবপুর) ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়ন বলেন, তিনটি এনজিও ও তাদের সহযোগিরা দীর্ঘদিন থেকে আমাদের ভোগদখলীয় জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করেছি। আমাদের এই জমি নিয়ে গেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। সন্তানদের নিয়ে পথে বসতে হবে আমাদের।
বাসিন্দা মজিবুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, ভোসডসহ কয়েকটি এনজিও শিবপুর মৌজার ৮০৭ নং ডিপি খতিয়ানে বহু দাগের সূচীতে অনিয়মের কারণে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস তদন্ত করে। সেখানে তদন্ত করে দেখেন, শিবপুর মৌজার ৮০৭ নং ডিপি খতিয়ানে মূলকপি ফেলে দিয়ে একটি ডুপ্লিকেট কপি সংযোজন করে। এই অনিয়মের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওয়তায় আনতে উজিরপুর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছে বরিশাল ভূমি অফিস।
এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভোসড এর চেয়ারম্যান একেএম মোস্তাফিজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক মহাদেব দাসকে বার বার ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। তবে এনজিও ভোসড এর বরিশালের কর্মকর্তা নিজাম জানান, সাতালায় পেন্ডমিক ফিসারিজ নামে আমাদের আলাদা প্রজেক্ট রয়েছে ওই বিষয়ে আমাদের নির্বাহী পরিচালক ভালো বলতে পারবেন আমাদের কিছুই জানা নেই।
তবে অন্বেষার চেয়ারম্যান অমেলুন্দু কর্মকার বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আমার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল আমি দেইনি পরে মামলা করায় তিনি নিজে এসে ক্ষমা চেয়ে গেছেন। এখন ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজগুলো করার জন্য এলাকাবাসীকে ফুসলিয়ে দিচ্ছেন। ভিলেজ পলিটিক্স বড় খারাপ বিষয় এটা আপনাদের বুঝতে হবে। ওখানে আমরা ২০০৩ সাল থেকে ফিশারিস ব্যবসা করে আসছি। কেউ কখনো আমাদের বিরুদ্ধে জমি দখলে অভিযোগ করেনি।
সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল বাসার লিটন বলেন, ভোসড এনজিওর মালিক মোস্তাফিজুর রহমান, একই ভূমিদস্যু বাহিনী গ্রামের অসহায় মানুষের জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। এটা আমরা কোনভাবেই হতে দেব না।
সাতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, শিবপুর গ্রামে এমন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে মোস্তাফিজ সাহেব, সাধারণ জনগণ ওনার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমি জনগণের পক্ষে মাঠে আছি। এ ব্যাপারে বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য শাহ আলম বলেন, শিবপুরবাসীর সাথে অন্যায় হয়েছে। আমি যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রয়েছি। আমি খবর পেয়ে ইউএনওকে জানিয়ে দিয়েছি শিবপুরবাসীর জন্য যেন কিছু করে। তিনি তদন্ত করে আমাকে জানাবেন। পরে কাজ না হলে আমি ডিসি সাহেবকে বলব।