বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশানে শুক্র (২৮ অক্টোবর) ও শনিবার (২৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৬৬-বছরের ঐতিহ্যবাহী উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মহাশ্মশান দীপালি উৎসব।
প্রতি বছর ভূত চতুর্দশী পুণ্য তিথিতে বরিশালের এ উৎসবকে ঘিরে ৫ একর ৪১ শতাংশ আয়তনের এ মহাশ্মশান হাজার হাজার মোমবাতির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠে। প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশে এই দিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মহাশ্মশানে সমবেত হয়ে তাদের প্রয়াত পূর্বপুরুষ ও স্বজনদের স্মরণে সমাধি সৌধে দ্বীপ জ্বালিয়ে দেন। একই সঙ্গে পালিত হয় কালিপূজা। এই প্রথা ১৮৫০ সাল থেকে বরিশালে মহাশ্মশান দীপালি উৎসব নামে পালিত হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
বরিশাল মহাশ্মশানের রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে শনিবার রাত ৮টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ভূত চতুর্দশী পূণ্য তিথিতে মহাশ্মশান দীপালি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার রাত ১২টা ১মিনিটে কাউনিয়া মহাশ্মশানে ও নতুন বাজার অমৃতাঙ্গনে (আদি শ্মশানে) শ্রীশ্রী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও জানান, এ দীপালি উৎসবে সমাধি সৌধে শুধু দ্বীপ জ্বালানোই হয় না, মৃত ব্যক্তির ছবি ফুল-চন্দন দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয় সমাধির ওপর। প্রিয়জনের উদ্দেশে খাবার-দাবারও দেওয়া হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে ধূপ জ্বেলে দেওয়া হয়। কেউ কেউ আবার ধর্মীয় গান ও খোল বাদ্যসহ কীর্ত্তন করেন প্রিয়জনের আত্মার সন্তুষ্টির জন্য।
এই উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটকও এসময় বরিশালে আসেন। তাদের কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের স্মৃতির উদ্দেশেও দ্বীপ জ্বেলে দেয়।
বরিশাল মহাশ্মশানের রক্ষা সমিতির সভাপতি মানিক মুখার্জি কুণ্ডু জানান, বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পরিচালনায়, সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় শ্মশানের যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম, সৌন্দর্যবর্ধন ও ঐতিহ্যবাহী শ্মশান দীপালি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
শ্মশান সমিতির নেতারা জানান মৃত্যুর ৮০ বছর পর আজ থেকে তিনশ বছর আগে ভারতের কেওড়াতলা মহাশ্মশান থেকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের চিতাভস্ম এনে এ মহামশ্মশানে স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও এ মহাশ্মশানে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমা, রাজনীতিবিদ শরৎচন্দ্র গুহ, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষ, ভাষা সৈনিক রাণী ভট্টাচার্য, জঙ্গীদের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জজ জগন্নাথ পাঁড়ে, চারুশিল্পী বলহরি সাহা, শ্যামপুরের জমিদার কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী (নাটু বাবু), কবি রবীন সমদ্দার, সাংবাদিক আইনজীবী মিহির লাল দত্ত, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দ দাশসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তিবগের্র সমাধি।
এদিকে এ উৎসবকে ঘিরে কিছুটা বাণিজ্য মুখর হয়ে পড়বে বরিশাল। দেশ-বিদেশের মানুষ আসতে শুরু করায় হোটলগুলো আগেই বুকিং হয়ে যায়। শ্মশান ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়ে মানুষের পদচারণা। শ্মশানঘাট এলাকায় বসে মেলা। সেখানে এবারেও থাকছে ২৫টির মতো স্টল। এবারই প্রথমবারের মতো ২৫টি লাইটপোস্ট বসিয়ে আলোকসজ্জায় নতুনত্ব আনে সিটি করপোরেশন।
শ্মশানে আগতদের সেবা প্রদানে নিয়োজিত থেকেছেন দেড়শ’ স্বেচ্ছাসেবক। নিরাপত্তার দায়িত্বে পোশাকধারী র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রপলিটান পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিন।
টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর, স্পটলাইট