বরিশালে দুই নদীর ভাঙনে বিপর্যস্ত ১৯ গ্রাম: ঝুঁকিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও অব্যাহত বৃষ্টি এবং পানি বৃদ্ধির ফলে বরিশালের মুলাদী উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ ও জয়ন্তী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে আগে থেকেই ভাঙন কবলিত ১৯টি গ্রাম। এসব গ্রামের অনেক বাড়ি-ঘর ইতিমধ্যে নদীর পেটে গেছে। ঝুঁকিতে আছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট এবং হাট-বাজারও।
আড়িয়াল খাঁ ও জয়ন্তী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
সরেজমিনে এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবেরচর, রামারপোল, চরনাজিরপুর, ঘোষেরচর গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বাটামারা ইউনিয়নের আলীমাবাদ, সেলিমপুর, পূর্ব সেলিমপুর, চরবাটামারা এবং মুলাদী সদর ইউনিয়নের পাতারচর, চরলক্ষীপুর, ভাঙার মোনা, পশ্চিম তেরচর গ্রামের বিভিন্ন অংশও ভেঙে যাচ্ছে।
এ ছাড়া আড়িয়াল খাঁ ও জয়ন্তীর ভাঙনে চরকালেখান ইউনিয়নের চরকালেখান, পশ্চিম চরকালেখান, পশ্চিম বানীমর্দন, চরকালেখান নোমরহাট, ছত্রিশ ভেদুরিয়া, গাছুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর ও চর গাছুয়া নতুন করে ঝুঁকিতে পড়েছে। চরকালেখানের মৃধারহাট, বেপারীরহাট ঝুটপট্টি, মুলাদী সদর ইউনিয়নের নন্দীরবাজার, মুলাদী তেরচর রাস্তারমাথা, কুতুবপুর লঞ্চঘাট হুমকির মুখে পড়েছে জয়ন্তী নদীর ভাঙনে।
চরকালেখান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম সরদার জানান, জয়ন্তী নদীর ভাঙনে মৃধারহাটের অনেক দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে বাজারটি ছোট হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং বর্ষায় পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন তীব্র হয়েছে। নদী ভাঙনে ৯৮ নং পূর্ব বানীমর্দন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রজমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সফিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নোমরহাট বাজার হুমকির মুখে পড়েছে।
সফিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা হিমু মুন্সী জানান, জয়ন্তী নদীর ভাঙনে তাঁর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে নদী ভাঙনে ব্রজমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে সফিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ভাঙন রোধের জন্য বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘নদী ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে মৃধারহাট, সফিপুর চরমালিয়া, সেলিমপুর, আলীমাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় স্বল্পমেয়াদি দরপত্রের মাধ্যমে ৩১টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙন কবলিত বাকি এলাকাগুলো রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাবুগঞ্জ পৌর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান শুভ বলেন, মুলাদী উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরাদ্দ স্বল্পতায় কাজ করা যাচ্ছে না। প্রকল্পের অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেলে ভাঙন রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিরোনামবরিশালের খবর