বরিশাল: দেশে পরপর দুটি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তরুণ মেধাবীদের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর বরিশাল পুলিশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বরিশাল তথা গোটা বিভাগে কোনো তরুণ বা কলেজ ছাত্র নিখোঁজ রয়েছে কিনা তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কেও ধারণা ও জ্ঞান নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সেই সাথে এ অঞ্চলের থানাগুলোতে দায়িত্বরত থাকা কর্মকর্তারা রয়েছে নিখোঁজ ব্যক্তি বিশেষের তথ্য সরবরাহে ব্যস্ত। একই সাথে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে বলে শোনা গেছে। যদিও এ অঞ্চলে সোমবার রাত পর্যন্ত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বা নিখোঁজ কোনো তরুণের তথ্য হাতে পায়নি পুলিশ। এ তথ্য বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ব্যস্ত রয়েছে।
ঈদুল ফিতরের আগে রাজধানীর গুলশানে রেস্তোরায় বিদেশি জিম্মি সঙ্কট এবং ঈদের নামাজে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নর্থ সাউথ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বরিশালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অধিক নজরদারিতে রাখা হয়। এমনকি ওই দুটি ঘটনার পর পুলিশ হেডকোয়াটারস থেকে নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে একটি ফ্যাক্সবার্তাও পাঠানো হয়। মূলত ওই বার্তা হাতে পাওয়ার পরপরই নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহে একটি বৈঠক করে বরিশাল পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে এখন নিখোঁজ তরুণ বা কলেজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানে কাজ করছে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা।
পাশাপাশি তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকেও সতর্ক দৃষ্টি ফেলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল পুলিশের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, শীর্ষ কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে বেশি মাত্রায় লক্ষ্য রাখা। সেই সাথে নিখোঁজদেরও সন্ধানে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি বরিশাল পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে। এমনকি প্রতিনিয়ত দায়িত্বরত ওইসব কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের কর্মরত থাকা অফিসারদের তদারকিও করছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়টি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ফরহাদ সরদারের আলাপকালে আভাস পাওয়া গেছে। তার ভাষায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশ হেড কোয়াটার্সের নির্দেশ এসেছে কঠোর অবস্থানে থাকার। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে জিরো টলারেন্সে থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে বরিশাল বিভাগের কোনো থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েনি। এমনকি বরিশাল জেলা বা মেট্রোপলিটন থানাগুলোতেও এ সংক্রান্ত জিডি হয়নি। এছাড়া এ অঞ্চলে কোনো শিক্ষার্থী বা তরুণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকা নিয়েও নিশ্চিত হতে পারছেনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আপাতত তথ্য সংগ্রহেই সীমাবদ্ধ থাকছে পুলিশ। যদিও বরিশাল রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. হুমায়ুন কবীর জানান, বিষয়টি এখন জাতীয় ইস্যু হওয়ায় সতর্ক দৃষ্টিতো অবশ্যই রাখতে হচ্ছে। রাজধানীর গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর পর মাঠ পর্যায়ে কর্মরত যারা ছুটিতে ছিলেন তাদের ছুটি বাতিল করে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢাকা থেকে প্রেরিত বার্তার আলোকে তথ্য সংগ্রহে মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বরগুনায় এক মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যার হুমকি দেয়ায় সেখানে তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার একেএম রুহুল আমিন জানান, ঈদের একদিন পরই নিখোঁজদের সন্ধানে তথ্য সংগ্রহের জন্য হেড কোয়াটার্স থেকে ফ্যাক্সবার্তা আসে। ওই বার্তায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে।
যে কারণে গত কয়েকদিন যাবত মেট্রোপলিটন ৪টি থানা পুলিশ জনসাধারণের নিরাপত্তায় জোরালো ভূমিকা রাখছে। গুলশানে জিম্মি সঙ্কটের বিষয়টি সামনে এনে তিনি জানান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে সদা প্রস্তুত। অবশ্য এ প্রস্তুতি মাদারীপুরের শিক্ষক রতন চক্রবর্তীর ওপর গত মাসের মাঝামাঝির সময় হামলার পরপরই নেয়া হয়েছিল। একই বিষয়ে বরিশাল পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম আক্তারুজ্জামান জানান, জেলার ১১ থানায় সোমবার রাত পর্যন্ত নিখোঁজ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। কিন্তু স্ব-স্ব থানার কর্মকর্তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে বলার পাশাপাশি সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর