বরিশাল: মাদক ব্যবসা নিয়ে ফনোলাপ ফাঁসের ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) অবু সাঈদকে বদলি করা হয়েছে। রোববার ওই ডিবি কর্মকর্তাকে অপরাধ শাখায় বদলি করা হয়েছে।’
তবে এ বদলি শাস্তিমূলক নয় বলে দাবি করে সাঈদ জানিয়েছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাকে আরেকটি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে ফোনালাপের অডিও রেকডিংটি ছড়িয়ে পড়ার পর নগর জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার গোলাম রউফকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
শওকত নামে একজন মাদকসেবী ও সরবরাহকারীর সঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই, নম্বর-১০৭৭) রতন চৌধুরীর ফোনালাপটি বরিশালটাইমসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :-
‘এসি ছারের (স্যারের) সাথে আজকে কথা হইছিল। ছার ডাইরেক্টলি বলেছে, শওকত, ফারুক, তালুকদার বাবুল সবগুলারে ধর। জিনিস (মাদক) লাগবে না, জিনিস ধইর্যা দিমুহানে (দেব)। পরে বলছি কী— ছার, শওকত হইল আমাগো নিয়ারেস্ট লোক। ও মহুরিগিরি করে, ও তো ব্যাচে-ট্যাচে না (বিক্রি করে না) দুই-একটা মাল (মাদক) খায় টায়, এইডা মিথ্যা কতা না। আর যা খায় হেইডা বাবুলের কাছ দিয়াই নেয়। ছার জিগায় এইটা সত্যি? আমি কই, জি ছার! বিসিক বাবুলের কাছ দিয়াই নেয়।
ছারে শুইন্যা কয়, ঠিক আছে তাইলে। ঠিক আছে মানে কী, বিসিক বাবুলের সাথে একটা কন্ট্রাক্ট আছে মনে হয়, বোজ্য (বুঝেছ)? এই একখান কতা কইয়া তোমারে সেইভ কইর্যা দিছি। মাল (ফেনসিডিল) ৫০টা-১০০টা যা চালাইতে পার। ও কিন্তু ইয়াবাও ব্যাচে (বিক্রি করে) বোজ্য? ইয়াবাও ধরছে কিন্তু (ডিবিতে), গুডি (ইয়াবা) ছোডগুলা ধরছে চম্পা (মাদকসেবীদের কাছে কম দামি ইয়াবার নাম চম্পা)। হ্যাঁ (চম্পা) অন্য জায়গায় ১৩০, ১৫০ টাকাও ব্যাচে। ও (বিসিক বাবুল) ব্যাচে ১২০ টাকা।
তুমি এই তথ্য দুই-চাইর জায়গায় জানাইয়া দেলে (দিলে) বিসিক বাবুলের বেচাকেনা একটু ভালো হইবে। আর সাপোর্ট যা দেয়া লাগে হেইডা আমি দিমু হানে। তুমি এর আগে ২০টা ২০টা কইর্যা দুইবার মাল (ফেনসিডিল) নেছালা। হেরপর আবার বাদ দিয়া দেছো। বাইরে কয় টাহা কইর্যা কেন? ফ্রেশ মাল আসছে, ফ্রেশ মাল। শোনো, শোনো, শোনো! এসি ছারে আর আমি দুইজনেই বিকালবেলা বাইর হইয়া গেছিলাম, ওই জায়গা দিয়া ঘুইর্যা আইছি। জিনিস (ফেনসিডিল) একেবারে এক নম্বর জিনিসই আনছে, সমস্যা নাই। তুমি চালাইয়া নিও। তোমার সেইফের বিষয়টা আমি দেখমুহানে। আর আমি বইলা দিছি বাবুলরে, শওকত ভাই কালকে থেকে ২০-৪০টা যা পারে নেবে হানে, টেনশন করার কিছু নাই, আর বাবুলরে বলছি শওকতের ব্যাপারটাও দেইখ্যেন। আর আমি ছারের সাথে বিস্তারিত বইলা দিছি। তুমি চাইলে ছারের সাথেও যোগাযোগ কইর্যা দেখতে পার যে, ছার, আপনি নাকি এই কথা বলছেন, রতন ভাই তো বলল। ঠিক আছে কালকে থেকেই কইররো কিন্তু।’
এর আগে আরেকটি ফোনালাপে রতন একই ব্যক্তিকে বলেন, ‘বিসিকের যে বাবুল ভাই, হে তো মনে হয় ব্যবসা শুরু করছে জান নাকি।’ শওকত উত্তরে বলেন, ‘হ হে কইছে।’ রতন বলেন, ‘তুমি যে মালডা খাও নেও, হেইডা অন্য জায়গা দিয়া না নিয়া একটা জায়গা (বিসিক বাবুল) দিয়া নেও। কারণ, এই একটা জায়গার সাথে আমাগো প্রশাসনের লিয়াজুঁ আছে। যে কারণে তুমি যদি মাল লইয়া ধরাও খাও কইলেই হইবে যে, বিসিক বাবুলের কাছ দিয়া আনছি, মাফ পাইয়া যাবা।’ শেষমেশ এএসআই রতন বলেন, ‘এহন আমার কথা শোনো, তুমি কালকে থেকে মাল নেবা বাবুলের ওইখান থেকে। এইডা তোমার সেইভের জন্য। আর না হইলে তোমারে কিন্তু ধরার হুলিয়া হইছে। যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাইবে, মাল লাগবে না, এই অর্ডার হইছে বোজ্য? এই কথা আমি তোমারে গোপনে বলছি, এই কথা দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির কানে না দিয়া তুমি যা নেও ওর (বিসিক বাবুল) কাছ থেকে নিয়াই করবা, যদি কেউ তোমারে ধরে আমারে ফোনডা ধরাইয়া দেবা, বাকিটা আমি দেখমু।’
জবাবে শওকত আবারও ‘আচ্ছা ছার’ বলে কথা শেষ করতে চাইলেও রতন বলেন, ‘আমি বাবুল ভাইরে ফোন দিয়া বলমুহানে, অন্য সবার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা কইর্যা নেন, ওর (শওকত) কাছ থেকে ৫০ টাকা কইর্যা কম নিয়েন। যা করা লাগে আমি করমুহানে। তুমি ২০-৪০টা যা চালাইতে পারবা ওইহান দিয়া নেবা। আমি কালকে খোঁজ নিমু কিন্তু বাবুল ভাইয়ের কাছ থেকে।’
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর