৮ ঘণ্টা আগের আপডেট সকাল ৮:৩৭ ; মঙ্গলবার ; ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

বরিশালে প্রদীপ জ্বলবে পূর্বসূরীর সমাধীতে

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০১৬

বরিশাল: মহাশ্মশান দেড়শতাধিক বছরব্যাপী নানা ঘটনার, স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছে। সংগ্রামী বহু মানুষের শেষ আশ্রয় এই শ্মশানেই। বহু সমাধির উত্তর প্রজন্ম আজ আর নেই। সে সব সমাধিতে হয়তো কোন দিন কেউ ফুল দেবে না।’ তবুও শ্মশান দিপালী উৎসবে হয়তো দীপ জ্বেলে দেবে কেউ। মানুষ মরে গেলে স্মৃতি ধরে রাখার এই চেষ্টার মধ্য দিয়েই রয়েছে পূর্বসূরীর প্রতি উত্তর প্রজন্মের বিনম্র শ্রদ্ধা। বরিশাল মহাশ্মশানে এই অতীত ইতিহাসের সন্ধান মেলে। যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শ্মশান দিপালী উৎসব পালনে মহাশ্মশানে প্রস্তুত। সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে উৎসব। মহাশ্মশানের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে-স্বজনবিহীন কয়েক হাজার সমাধিতে নির্দিষ্ট রঙ করে নতুন করে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে সমাধি সংস্কার এবং ধূয়ে-মুছে কাজ শেষ করছেন স্ব স্ব স্বজনরা।

ঐতিহ্যবাহী এই মহাশ্মশানে ২০০২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ মৃতদেহ দাহ করা হয়েছে। যাদের সকলেরই সমাধি এ শ্মশানে স্থাপন করা হয়েছে।’ নেতৃবৃন্দ জানানÑ উৎসব উপলক্ষে ৭ একর ৪১ শতাংশ আয়তনের এ মহাশ্মশানে করা হয়েছে বাহারী আলোকসজ্জা। প্রতি বছর ভূত চতুর্দশী পূণ্য তিথিতে এ উৎসব হয়ে থাকে। বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ মহাশ্মশানে প্রায় লক্ষাধিক সমাধি স্থাপন করা রয়েছে। যাতে শ্রদ্ধা জানাতে নেপাল এবং ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এ শ্মশানে। এদিকে দিপালী উৎসব উপলক্ষে মহাশ্মশান রক্ষা সমিতি দুদিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কিশোর কুমার দে আরও জানান, এখানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি রয়েছে।

সমাধিগুলোতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে দীপ প্রজ¦লন করা হয় উৎসবের দিন। বরিশাল মহাশ্মশানের রক্ষা সমিতির সভাপতি মানিক মুখার্জি কুডু জানান, শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ভূত চতুর্দ্দশী পূণ্য তিথিতে দু’দিনব্যাপী উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাউনিয়া মহাশ্মশানে ও নতুন বাজার অমৃতাঙ্গণে (আদি শ্মশানে) শ্রী শ্রী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। দিপালী উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে জোরদার অবস্থানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।’ বরিশাল মহাশ্মশান ১৭৯৭ সালে বাকেরগঞ্জ ডিষ্ট্রিক্ট এ্যাক্ট পাশ হলেও বরিশাল জেলার সরকারি ভবন ১৮১৭ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর আগে বাকেরগঞ্জে, তারও আগে নলছিটির বাড়ৈকরণে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রম চলত।’  ১৮৭৬ সলে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হওয়ার আগেই বরিশাল নগরী গড়ে উঠেছিল। আর এই নগর ঘিরেই মূলত বরিশাল মহাশ্মশানের উৎপত্তির ইতিহাস।’  ১৯০১ সালের সিএস (ক্যাডস্টল সার্ভে) পরচা ও ম্যাপে বরিশাল মহাশ্মশানের উল্লেখ রয়েছে। ১৮০৪ সালে গার্ডনার বরিশালের ডিষ্ট্রিক্ট জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট হয়েই একটি আধাপাকা জেলখানা নির্মাণ করেন।’ মূলত এসময়ের কিছু পরে জেলখাল কাটা স্বাভাবিক। নামকরণই এর ইতিহাস বহন করে। শ্মশানের সাথে নদী-খাল কিংবা স্রোতধারার যোগসূত্র রয়েছে।’  শ্মশানের ভষ্ম এই স্রোতধারাই বহন করে, পদ্মা কিংবা গঙ্গায় নিক্ষেপ করে পূণ্যফল নিয়ে আসে (সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যুগ যুগ ধরে এই বিশ্বাসের ফলেই মানব ভস্ম নদীতে নিক্ষেপের প্রচলন) মূলত ১৮০০ সালের পরবর্তী সময়ে বরিশাল নগরীর সরকারী অফিস সমূহের জন্য ঢাকা, বিক্রমপূর ও ফরিদপূর থেকে প্রচুর মানুষ বরিশালে ছুটে আসে।’  ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বহু শিক্ষিত ব্রাহ্মধর্মাবলম্বীরাও বরিশালে ছুটে আসে।

কবি জীবনানন্দ দাশের পিতামহ সর্বানন্দ দাশ কালেকটরেটের চাকুরী নিয়ে বরিশালে এসেছিলেন। তেমনি ভাবে ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জিলা স্কুলের চাকুরি নিয়ে এসেছিলেন পন্ডিত ব্রাহ্মধর্মপ্রচারক রামতনু লাহিড়ী (১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ এর মধ্যে) তৎকালীন এই আবহই বলে দেয় একটি শিক্ষিত জন সমাজের অস্তিত্ব বরিশালে ছিল।’  এসবের কারণেই নগরীর জেল খালের পাড়ে নতুন বাজার এলাকায় আদিশ্মশান ও একই সাথে ব্রাহ্মদের জন্য শ্মশান গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে ব্রাহ্মদের স্মৃতিবাহী ৩টি সমাধির অস্তিত্ব মিললেও পুরো শ্মশানের ৪৪ শতাংশ পুকুর ভরাট করে ও অন্যত্র বেশ কয়েকটি মন্দির, সিটি কর্পোরেশনের লম্বা দোতালা স্টল, বাজার, মসজিদ নির্মাণ ও বসি- গড়ে উঠেছে। এসব স’াপনার ভিড়ে আদিশ্মশান ও ব্রাহ্ম শ্মশানের সমাধি স্মারক বিলুপ্তির পথে। ১৯০০ সালের আগেই বর্তমানে কাউনিয়ার মহাশশ্মান গড়ে ওঠে। দুটো কারণে এই খানে মহাশশ্মান গড়ে ওঠা স্বাভাবিক।’  এর একটি জায়গার সংকুলান না হওয়া । অপরটি ব্রাহ্মদের সমাধি থেকে দূরে থাকা । এর কারণ হিসেবে বলা যায় একশো বছরেরও আগে ব্রাহ্মদের নবজাগরণ ও ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিতদের প্রভাবে দলে দলে মানুষ যখন নূতন ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলো তখন সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রভাবশালী অংশ ও জমিদাররা সনাতন ধর্মরক্ষার জন্য বাংলা ১৩২৫ সালে ‘‘ধর্ম রক্ষিণী সভা’’ স্থাপন করেছিলেন। ব্রাহ্মদের ওপর তাদের রাগ সে কারণেই। এজন্য আলাদা মহাশ্মশান গড়ে তোলাও বিচিত্র নয়।’ কাউনিয়া মহাশ্মশান প্রাচীণত্বে শত বছর পেড়িয়ে গেছে। দেড়শতাধিক হওয়া ও বিচিত্র নয়। এর কারণ কাউনিয়া মহাশ্মশানের দাগ, খতিয়ানসহ ১৯০১ সালের সি.এস পরচায় উল্লেখিত রয়েছে।

ফলকসহ ১৩২৫ সালের সমাধি পাওয়া গেছে। এর আগে বহু প্রাচীণ সমাধি ধ্বংস হয়েছে এবং বহু সমাধি সাল তারিখ বিহীন পড়ে থাকায় এর স্থাপনের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। নতুন বাজার আদি মহাশ্মশান ও কাউনিয়ার মহাশ্মশানের মালিক বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পরিচালনায়, সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় শ্মশানের যাবতীয় উন্নয়ন, কার্যক্রম সৌন্দর্যবর্ধন ও ঐতিহ্যবাহী শ্মশান দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শ্মশানের দাগ, খতিয়ান ও ভূমির পরিমান: নতুন বাজার আদিশ্মশান: বগুড়া আলেকান্দা মৌজার ২ নং খতিয়ানের ২৩৭৩, ২৩৭৪, ২৩৭৪ দাগে জমির পরিমান যথাক্রমে ১.০৬৫ একর, .২৩৮ একর, ও .১২৮ একর। মোট জমির পরিমান ১.৪৩১ একর। ব্রাহ্মদের শ্মশান: ব্রাহ্মশ্মশানের জমির মোট পরিমান ৪৪.৮ শতাংশ। বগুড়া আলেকান্দা মৌজার ২ নং খতিয়ানের ২৩৯৩ দাগে এই জমি। কাউনিয়া মহাশ্মশান : বগুড়া আলেকান্দা মৌজার ২ নং খতিয়ানের ৪০০ দাগে ৯ শতাংশ, ৪০১ দাগে ৮০ শতাংশ, ৪০২ দাগে ২৪ শতাংশ, ৪০৩ দাগে ১৮০ শতাংশ, ৪০৪ দাগে ১৭১ শতাংশ, ৪০৫ দাগে ১১ শতাংশ (রাস্তা), ৪০৯ দাগে ৮৬ শতাংশ, সবমিলিয়ে ৫ একর ৫০ শতাংশ। তিন শ্মশানে মোট ভূমির পরিমান ৭ একর ৪১ শতাংশ। সমাধি সংখ্যা: বরিশাল মহাশ্মশানের রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দে নারু জানিয়েছেন এখানে পাকা সমাধি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। এর মধ্যে পাঁচশোর বেশী সমাধি রয়েছে যাদের কোন স্বজন নেই।’

এ ধরনের শ্মশানকে হলুদ রঙ দিয়ে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মৃত্যু রেজিষ্ট্রার ডেস্ক জানিয়েছে- বরিশালের ঐতিহ্যবাহী মহাশ্মশানে ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ মৃতদেহ দাহ করা হয়েছে। যাদের সকলেরই সমাধি এ শ্মশানে স্থাপন করা হয়েছে। তবে এর আগের সংখ্যা হিন্দু ও মুসলমানদের একই খাতায় থাকায় তাদের আলাদা করে হিসাব করা যায় নি ।’প্রাচীণ সমাধি: কাউনিয়াস্থ’ বরিশাল মহাশ্মশান প্রায় দেড়শো বছরের হলেও, খুব প্রাচীণ সমাধিগুলো সংস্কারবিহীন হয়ে খালে বা পুকুরে পরে ধ্বংস হয়ে গেছে। কোন কোনো প্রাচীণ মঠের সাল তারিখ উৎকীর্ণ না থাকায় এর নির্মাণ সাল উদ্ধার করা যায়নি। বরিশাল মহাশ্মশানের প্রতিটি সমাধি খুঁজে পশ্চিম দিকের খাল পাড়ে ‘মোচন নিবাসি কমল নাথ ঘোষ মহাশয়ের কন্যা বিরাজ মোহিনী’ই সবচেয়ে প্রাচীণ সমাধি সৌধ হিসেবে ফলকের তারিখ হতে উদ্ধার করা হয়েছে। সমাধি সৌধের উৎকীর্ণ তারিখ দেখে এর নির্মাণ সাল ৯২ বছর আগের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বরিশাল মহাশ্মশান নতুন আঙিকে: কাউনিয়াস্থ’ মহাশ্মশানে ২ টি পাকা দাহঘর, সৎকার সহযাত্রীদের জন্য ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে শ্রীশ্রী শ্মশান কালীমাতার মন্দিরটি ৯০ এর দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ’ হওয়ার পরে তা পুনঃনির্মাণ হয়েছে।’ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা একটি স্থান নির্মাণ করা হয়েছে।

শ্মশানের প্রায় প্রতিটি স্থানেই পায়ে চলার পাকা পথ নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও পুরো শ্মশানে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। মহাশ্মশানে ঢোকার জন্য ২টি গেইট নির্মাণ করা হয়েছে।’ কারিকর বিড়ির সৌজন্যে নির্মাণ করা হয়েছে বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ স্মৃতি তোরণ অন্যটি মহাশ্মশানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দে নারু তার পিতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছেন। মহাশ্মশানে মন্দির ভিত্তিক একটি গণশিক্ষা কার্যক্রমও চলছে।’ এই মহাশ্মশান বৃক্ষশোভিত হয়ে একটি নান্দনিক স্থানে পরিণত হয়েছে। ৩টি পুকুর ও পশ্চিম পাড়ে জেলখাল রয়েছে। সৎকার (দাহ) কাজের সহযোগিতার জন্য ব্যবসায়ী উত্তম বণিক টাইলসসহ একটি ঘাটলা নির্মাণ করেছেন।’ আধুনিক দাহ ঘরের একটি নির্মাণ করেছেন ব্যবসায়ী শ্যাম লাল বণিক, অপরটি নির্মাণ করা হয়েছে মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির উদ্যোগে।’ এছাড়া আরো একটি আধুনিক অপেক্ষাঘর নির্মাণ মাঝ পথে রয়েছে। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) শচীন কর্মকার এটি নির্মাণে প্রাথমিক অনুদান দিয়েছিলেন। বরিশাল মহাশ্মশানের উন্নয়ন কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির কয়েকজন নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে।’

প্রয়াত রাজনীতিবিদ হিমাংশু কুমার দাশগুপ্ত নাথু বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সূচনা করেছিলেন। মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দে নারু জানান- ২০০২ থেকে ২০১০ সালের কমিটির সভাপতি শ্রীশানি- রঞ্জন চক্রবর্তী ও সম্পাদক মানিক মুখার্জি কুডু শ্মশান উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেন।’ শ্মশান উন্নয়নে সমাজসেবী রাখাল চন্দ্র দে, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিজয় কৃষ্ণ দেসহ বহু মানুষ নানাভাবে সমপৃক্ত হয়ে উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখেন। সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের মতে পৌর প্রশাসক আহসান হাবিব কামালের সময়ে প্রায় ৮ লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার হয়। পরবর্তীতে মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের সময়ে ৪ লাখ টাকা, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আওলাদ হোসের দিলু’র সময়ে ৩লাখ টাকা, মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়ে সাড়ে ৬ লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার হয়।’ সবমিলিয়ে ২০০২ থেকে এ যাবৎ প্রায় কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রমের সূচনা হয় যার সিংহভাগই দানশীল ব্যক্তিদের অনুদানে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাধি সৌধ: বরিশাল মহাশ্মশান শুধু বরিশাল জেলা নয়, ফরিদপুর, মাদারিপুর, পটুয়াখালীসহ অপরাপর জেলার বহু মানুষের শেষকৃত্য এখানেই সম্পন্ন হতো। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে এই শ্মশানই ছিল একমাত্র স্বীকৃত ও অভিজাত শ্মশান ঘাট। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলের বহু মানুষের শেষকৃত্য হলেও স্বজনহীন থাকায় তাদের অনেকের সমাধি চিহ্নিত করণ সম্ভব হয়নি।’  ব্রাহ্ম সমাধির মধ্যে কবি জীবনানন্দ দাশের পিতামহ সর্বানন্দ দাশ ও পিতা সত্যানন্দ দাশের সমাধি থাকা খুবই স্বাভাবিক।

বরিশালে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের মধ্যে তৎকালীন সময়ে মহাত্মা অশ্বিনী দত্তের সমাধি হয়েছিল কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশান ঘাটে, ডা. তারিণী গুপ্তের সমাধি বাড়িতেই হয়েছিল।’ অন্যান্য যাদের সমাধি সৌঁধের খোঁজ পাওয়া গেছে তার মধ্যে রাজনীতিবিদ শরৎচন্দ্র গুহ, কংগ্রেস সভাপতি প্রাণ কুমার সেন, বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ, মনোরমা বসু মাসীমা, তার স্বামী বাকালের জমিদার চিন্তাহরণ বসু, কংগ্রেস সম্পাদক শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, বিপ্লবী হিরণ লাল ভট্টাচার্য, ভাষা সৈনিক রাণী ভট্টাচার্য, সদর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক শানি- লতা গুহ, সংগ্রামী রাজনীতিবিদ সুধীর সেন, জঙ্গীদের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জজ জগন্নাথ পাঁড়ে, শিক্ষক অম্বিকা চরণ সরখেল, শিক্ষক মনীন্দ্র নাথ সমাজদার, সংগীত গুরু বরিশাল মহাশ্মশান পঞ্চানন ঘোষ, চারুশিল্পী বলহরি সাহা, বিএম কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক আরপি সেন, শিক্ষক শুধাংশু বটব্যাল, ভাষা সৈনিক বরুণ প্রসাদ বর্মন, শ্যামপুরের জমিদার কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী(নাটু বাবু), সংগীত শিক্ষক নারায়ণ সাহা, ড. প্রণতি বোস, শিক্ষক ব্রজেন্দ্র নাথ বড়াল, ব্যয়ামগুরু বলাই শীল, কবি রবীন সমদ্দার, প্রকাশক মাখম লাল চক্রবর্তী, শিক্ষক নরেন্দ্র নাথ দাস, শিক্ষক প্রাণ কৃষ্ণ সেন গুপ্ত, সাংবাদিক আইনজীবী মিহির লাল দত্ত, ডা. রনজিৎ বড়াল, হিমাংশু কুমার দাশগুপ্ত নাথু, ডা. দেবাশীষ সমদ্দার, ডা. বরুণ কুমার বসু, যাদের সমাধি স্মারক রয়েছে তাদের মধ্যে প্রয়াত সমাজসেবী অমৃতলাল দে, ডা. এস.সি রায় ও ড. স্বদেশ বসু উল্লেখযোগ্য।’

ঐতিহ্যের শ্মশান দিপালী উৎসব: প্রতিবছর ভূতচতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাদের সমাধি সৌঁধে দীপ জ্বালিয়ে দেওয়ার এই প্রথা কবে থেকে চালু হয়েছে তা জানা না গেলেও প্রয়াত শতবর্ষের বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ এই উৎসব ছোটবেলায়ও দেখেছিলেন বলে জীবদ্দশায় উল্লেখ করেছিলেন।’ সে কারণেই কাউনিয়া মহাশ্মশানের এই দিপালী উৎসবের প্রথা শতবছর ধরে চলছে বলা যায়। আদিশ্মশান প্রতিষ্ঠার পর্যায়ে এর প্রত্যক্ষ কোন বিবরণী সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।’ দিপালী উৎসবে প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে সমাধি সৌঁধে শুধু মাত্র দীপ জ্বালানোই হয়না, প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে খাবার-দাবার ও দেয়া হয়ে থাকে। সেই সাথে ধূপ, ধুপকাঠি জ্বেলে দেয়া হয়।

কেউ কেউ ধর্মীয় গান ও খোল বাদ্য সহকারে কীর্তণ করেন প্রিয়জনের আত্মার সনু-ষ্টির জন্য। প্রিয়জনদের এই ‘শ্মশান দিপালী’ উৎসব বরিশাল বিভাগ তথা ও বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে শ্মশান দিপালী উৎসব পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারতবর্ষের কোথাও উৎসব আকারে পালিত হয় না। এই উৎসব এখন- বরিশালবাসীর নিজস্ব চিন্তা, সংস্কৃতির ফসল। প্রতিবছর শশ্মান দিপালী উৎসবে, সমাধি সৌধে দীপ জ্বেলে দেবে দেবার পর আলোর রোশনাইতে ভরে ওঠে মহাশ্মশান। এই উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক এসময় বরিশালে আসেন। তাদের কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের স্মৃতির উদ্দেশে দীপ জ্বেলে দেয়। শ্মশান দিপালীর এই উৎসব একক ও অনন্য। এই দিপালী উৎসব বরিশালের শতবছরের ঐতিহ্যের স্মারক।’

বরিশালের খবর, স্পটলাইট

আপনার ত লিখুন :

 

ই বিের ও সা
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  নৌকাপ্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী মঞ্চে, রাজাপুর বিএনপির ২ নেতা বহিষ্কার  নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন অভিযোগে নৌকাপ্রার্থীকে শোকজ  বাকেরগঞ্জের আলোচিত ‘হাতকাটা’ মামুনকে কুপিয়ে হত্যা  ছাত্রদল নেতাকে না পেয়ে ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেলো পুলিশ  আ’লীগের সমাবেশে ‘অস্ত্র হাতে’ বিএনপি নেতা, নৌকাপ্রার্থীকে শোকজ  মনোনয়ন বাতিল শুনে কাঁদলেন গ্রাম পুলিশ  বরিশালে কিশোর-কিশোরীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে সচেতনতা সভা  মনোনয়নপত্রে মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর, আটকে গেল ভোটে যাওয়ার পথ  নৌকাপ্রার্থীর নির্বাচনী সমাবেশে অস্ত্র হাতে বিএনপি নেতা (!)  বরিশালের ৬ আসনে অর্ধেকের বেশি প্রার্থী ব্যবসায়ী